পাতা:লোকরহস্য-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম সংখ্য-পাঠশালার পণ্ডিত মহাশয় টিপু টিপ করিয়া বৃষ্টি পড়িতেছে ; আমি ছাতি মাথায়, গ্রাম্য পথ দিয়া স্থাটিতেছি । বৃষ্টিটা একটু চাপিয়া আসিল। তখন পথের ধারে একখানা আটচালা দেখিয়া, তাহার পরচালার নীচে আশ্রয় লইলাম। দেখিলাম, ভিতরে কতকগুলি ছেলে বই হাতে বসিয়া পড়িতেছে। এক জন পণ্ডিত মহাশয় বাঙ্গালা পড়াইতেছেন। কাণ পাতিয়া একটু পড়ানটা শুনিলাম। দেখিলাম, পণ্ডিত মহাশয়ের ব্যাকরণের উপর বড় অনুরাগ। একটু উদাহরণ দিতেছি। পণ্ডিত মহাশয় এক জন ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বল দেখি, স্থ ধাতুর উত্তর ক্ত প্রত্যয় করিলে কি হয় ?” # ছাত্রটি কিছু মোটা-বুদ্ধি, নাম শুনিলাম, “ভোদা - ভোদা ভাবিয়া চিন্তিয়া বলিল, “আজ্ঞ, ভূ ধাতুর উত্তর ক্ত করিলে ভুক্ত হয়।” পণ্ডিত মহাশয়, ছাত্রের মূখত দেখিয়া চটিয়া উঠিলেন এবং তাহাকে "মূৰ্খ।” “গর্দভ।” প্রভৃতি নানাবিধ সংস্কৃত বাক্যে অসংস্কৃত করিলেন। ছাত্রও কিছু গরম হইয়া উঠিল, বলিল, “কেন পণ্ডিত মহাশয়! ভূক্ত শব্দ কি নাই ?” পণ্ডিত। থাকিবে না কেন ? ভুক্ত কিসে হয়, তা কি জানিস না ? ছাত্র। তা জানিব না কেন ? ভাল করিয়া চিবিয়া গিলিয়া ফেলিলেই ভুক্ত হয়। পণ্ডিত। বেল্লিক ! বানর। তাই কি জিজ্ঞাসা করছি ? তখন ভোদার প্রতি বড়ই অসন্তুষ্ট হইয়। তিনি তাহার পাশ্ববৰ্ত্তী ছাত্র রামকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “ভাল, রাম, তুমিই বল দেখি, ভুক্ত শব্দ কি প্রকারে হয় ?” রাম বলিল, “আজ্ঞ, ভূজ ধাতুর উত্তর ক্ত করিয়া ভুক্ত হয়।” পণ্ডিত মহাশয় ভোদাকে বলিলেন, “শুন্‌লি.রে ভোদা ? তোর কিছু হবে না।” ভোদা রাগিয়া বলিল, “না হয় না হোকৃ—আপনার যেমন পক্ষপাত ” পণ্ডিত। পক্ষপাত আবার কি রে, হনুমান । ভোদা। ওর কপালে “ভুজো”, আমার কপালে ভূ । ছাত্র যে স্বচবর্ষণীয় “ভুজো” এবং অদৃষ্টের তারতম্য স্মরণ করিয়া অভিমান করিয়াছে, পণ্ডিত মহাশয় তাহা বুঝিলেন না। রাগ করিয়া ভোদাকে এক ঘা প্রহার করিলেন, এবং আদেশ করিলেন, "এখন বল, ভূ ধাতুর উত্তর ক্ত করিলে কি হয় ?”