পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y 8 লোকসাহিত্য এতদ্বারা পাঠক এই কথা বুঝিবেন যে প্রত্যক্ষ জগৎ আমাদের কাছে ৰতটা সত্য, ছড়ার স্বপ্রজগৎ নিত্যস্বপ্নদর্শী বালকের নিকট তদপেক্ষা অনেক অধিক সত্য। এইজন্য অনেক সময় সত্যকেও আমরা অসম্ভব বলিয়া ত্যাগ করি, এবং তাহারা অসম্ভবকেও সত্য বলিয়া গ্রহণ করে । বৃষ্টি পড়ে টাপুর-টুপুর নদী এল বান। শিবু ঠাকুরের বিয়ে হল তিন কন্তে দান। এক কন্তে রাধেন বাড়েন এক কন্তে খান । এক কন্তে না খেয়ে বাপের বাড়ি যান । এ বয়সে এই ছড়াটি শুনিবামাত্র বোধ করি প্রথমেই মনে হয় শিবু ঠাকুর যে তিনটি কন্যাকে বিবাহ করিয়াছেন তন্মধ্যে মধ্যম কন্যাটিই সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমতী । কিন্তু এক বয়স ছিল যখন এতাদৃশ চরিত্রবিশ্লেষণের ক্ষমতা ছিল না। তখন এই চারটি ছত্র আমার বাল্যকালের মেঘদূতের মতো ছিল । অামার মানসপটে একটি ঘনমেঘান্ধকার বাদলার দিন এবং উত্তালতরঙ্গিত নদী মূর্তিমান হইয়া দেখা দিত। তাহার পর দেখিতে পাইতাম সেই নদীর প্রাস্তে বালুর চরে গুটিদুয়েক পানসি নৌকা বাধা আছে এবং শিবু ঠাকুরের নববিবাহিতা বধূগণ চড়ায় নামিয়া রাধাবাড়া করিতেছেন। সত্য কথা বলিতে কী, শিবু ঠাকুরের জীবনটিকে বড়ো মুখের জীবন মনে করিয়৷ চিত্ত কিছু ৰাকুল হইত। এমন-কি, তৃতীয়া বধূঠাকুরানী মর্মাস্তিক রাগ করিয়া দ্রুতচরণে বাপের বাড়ি-অভিমুখে চলিয়াছেন, সেই ছবিতেও আমার এই স্থখচিত্রের কিছুমাত্র ব্যাঘাতসাধন করিতে পারেন নাই। এই নিবোধ তখনো বুঝিতে পারিত না, ঐ একটিমাত্র ছত্রে হতভাগ্য শিবু ঠাকুরের জীবনে কী এক হৃদয়বিদারক শোকাবহ পরিণাম স্থচিত হইয়াছে। কিন্তু পূর্বেই বলিয়াছি, চরিত্রবিশ্লেষণ অপেক্ষ চিত্রবিরচনের দিকেই তখন মনের গহিট ছিল । এখন