পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য

সঙ্গে আমাদের গ্রামসম্পর্ক আছে। নতুবা, এতবড়ো লোকটা যিনি সপ্তবিংশতি নক্ষত্রসুন্দরীর অন্তঃপুরে বর্ষ যাপন করিয়া থাকেন, যিনি সমস্ত স্বরলোকের স্বধারস আপনার অক্ষয় রৌপ্যপাত্রে রাত্রিদিন রক্ষা করিয়া আসিতেছেন, সেই শশলাঞ্ছন হিমাংশুমালীকে মাছের মুড়ো, ধানের কুঁড়ো, কালে গোরুর দুধ খাবার বাটির প্রলোভন দেখাইতে কে সাহস করিত ! আমরা হইলে বোধ করি পারিজাতের মধু, রজনীগন্ধার সৌরভ, বউ-কথাকও’এর গান, মিলনের হাসি, হৃদয়ের আশা, নয়নের স্বপ্ন, নববধূর লজ্জা প্রভৃতি বিবিধ অপূর্বজাতীয় দুর্লভ পদার্থের ফর্দ করিয়া বসিতাম– অথচ চাদ তখনো যেখানে ছিল এখনো সেখানেই থাকিত । কিন্তু ছড়ার চাদকে ছড়ার লোকেরা মিথ্যা প্রলোভন দিতে সাহস করিত না— খোকার কপালে টী দিয়া যাইবার জন্য নামিয়া আসা চাদের পক্ষে যে একেবারেই অসম্ভব তাহা তাহারা মনে করিত না । এমন ঘোরতর বিশ্বাসহীন সন্দিগ্ধ নাস্তিক-প্রকৃতি তাহারা ছিল না। সুতরাং ভাণ্ডারে যাহা মজুত আছে, তহবিলে যাহা কুলাইয়। উঠে, কবিত্বের উৎসাহে তাহার অপেক্ষ অত্যন্ত অধিক কিছু স্বীকার করিয়া বসিতে পারিত না। আমাদের বাংলাদেশের চাদামামা বাংলাদেশের সহস্ৰ কুটির হইতে স্বকণ্ঠের সহস্র নিমন্ত্রণ প্রাপ্ত হইয়া চুপিচুপি হাস্ত করিত ; হা’ও বলিত না, না’ও বলিত না ; এমন ভাব দেখাইত যেন কোনদিন, কাহাকেও কিছু সংবাদ না দিয়া, পূর্বদিগন্তে যাত্রারম্ভ করিবার সময়, অমনি পথের মধ্যে কৌতুকপ্রফুল্প পরিপূর্ণ হাস্তমুখখানি লইয়া ঘরের কানাচে আসিয়া দাড়াইবে ।  আমরা পূর্বেই বলিয়াছি, এই ছড়াগুলিকে একটি আস্ত জগতের ভাঙা টুকরা বলিয়। বোধ হয়। উহাদের মধ্যে বিচিত্র বিস্মৃত সুখদুঃখ শতধা-বিভক্ত হইয়া রহিয়াছে। যেমন পুরাতন পৃথিবীর প্রাচীন সমুদ্রতীরে কর্দমতটের উপর বিলুপ্তবংশ সেকালের পাখিদের পদচিহ্ন পড়িয়াছিল— অবশেষে কালক্রমে কঠিন চাপে সেই কর্দম, পদচিহ্নরেখা-সমেত, পাথর হইয়া গিয়াহুে— সে চিহ্ন