পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছেলেভুলানো ছড়া °金 উক্ত অজ্ঞাতনামী কস্তাটি অপরিমেয় মূর্খতা প্রকাশ করিয়াছিল। সে হতভাগিনী স্বপ্নেও জানিত না, তাহার সেই একটি দিনের মর্মভেদী ক্ৰন্দনধ্বনির সহিত এই ব্যাকরণের ভুলটুকুও জগতে চিরস্থায়ী হইয়৷ যাইবে। জানিলে লজ্জায় মরিয়া যাইত। হয়তো ভুলটি গুরুতর নহে ; হয়তো ভগিনীকে সম্বোধন করিয়া কথাটা বলা হইতেছে এমনও হইতে পারে । সম্প্রতি যাহারা বঙ্গভাষার বিশুদ্ধিরক্ষাব্রতে ভাষাগত প্রথা এবং পুরাতন সৌন্দর্যগুলিকে বলিদান করিতে উদ্যত হইয়াছেন ভরসা করি তাহারাও মাঝে মাঝে স্নেহবশত আত্মবিশ্বত হইয়া ব্যাকরণলঙ্ঘন-পূর্বক ভগিনীকে ভাই বলিয়া থাকেন, এমন-কি, পত্নীশ্ৰেণীয় সম্পর্কের দ্বারা প্রতিপূর্ণ ভ্রাতৃসম্বোধনে অভিহিত হইলে তৎক্ষণাৎ তাহাদের ভ্রম সংশোধন করিয়া ८तिम न्ब1 ।। আমাদের বাংলাদেশের এক কঠিন অন্তরূবেদন আছে– মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানো । অপ্রাপ্তবয়স্ক অনভিজ্ঞ মূঢ় কন্যাকে পরের ঘরে যাইতে হয়, সেইজন্য বাঙালি কন্যার মুখে সমস্ত বঙ্গদেশের একটি ব্যাকুল করুণ দৃষ্ট নিপতিত রহিয়াছে। সেই সকরুণ কাতর স্নেহ, বাংলার শারদোৎসবে স্বগীয়তা লাভ করিয়াছে। আমাদের এই ঘরের স্নেহ, ঘরের দুঃখ, বাঙালির গৃহের এই চিরন্তন বেদন হইতে অশ্রুজল আকর্ষণ করিয়া লইয়া বাঙালির হৃদয়ের মাঝখানে শারদোৎসব পল্লবে ছায়ায় প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ইহা বাঙালির অম্বিকাপূজা, এবং বাঙালির কন্যাপূজাও বটে। আগমনী এবং বিজয়া বাংলার মাতৃহৃদয়ের গান। অতএব সহজেই ধরিয়া লওয়া যাইতে পারে যে, আমাদের ছড়ার মধ্যেও বঙ্গজননীর এই মর্মব্যথা নানা আকারে প্রকাশ পাইয়াছে। আজ দুর্গার অধিবাস, কাল দুর্গার বিয়ে । দুর্গ যাবেন শ্বশুরবাড়ি সংসার কাদায়ে ।