পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२ লোকসাহিত্য পিঙ্করের মধ্যে আকাশের পাখি। শতসহস্ৰ বার প্রতিষেধ প্রতিরোধ প্রতিবাদ প্রতিঘাত পাইয়াও তাহার এ বিশ্বাস কিছুতেই গেল না যে, সে অনায়াসেই নিয়ম না মানিয়া চলিতে পারে। সে মনে মনে জানে ‘আমি উড়িতে পারি’, এইজন্তই সে লোহার শলাকাগুলাকে বারংবার ভুলিয়া যায়। ধনকে লইয়। বনকে যাইবার কোনো আবশুক নাই, ঘরে থাকিলে সকল পক্ষেই স্থবিধা । অবশু, বনে অনেকট নিরাল পাওয়া যায় সন্দেহ নাই, কিন্তু তাহ ছাড়া আর বিশেষ কিছু পাওয়া যায় না। বিশেষত নিজেই স্বীকার করিতেছে, সেখানে উপযুক্ত পরিমাণে আহার্য দ্রব্যের অসম্ভাব ঘটিতে পারে। কিন্তু তবু ভালোবাসা জোর করিয়া বলে, “তোমরা কি মনে কর অামি পারি না ? তাহার এই অসংকোচ স্পর্ধাবাক্য শুনিয়া আমাদের মতো প্রবীণবুদ্ধি বিবেচক লোকেরও হঠাৎ বুদ্ধিভ্রংশ হইয়া যায়— আমরা বলি, তাও তো বটে, কেনই বা না পরিবে ? যদি কোনো সংকীর্ণহৃদয় বস্তু-জগৎ-বদ্ধ সংশয়ী জিজ্ঞাসা করে ‘খাইবে কী’, সে তৎক্ষণাৎ অম্লানমুখে উত্তর দেয়, ‘নিরলে বসিয়া চাদের মুখ নিরখি।” শুনিবামাত্র আমরা মনে করি, ঠিক সংগত উত্তরটি পাওয়া গেল। অন্যের মুখে যাহা ঘোরতর স্বতঃসিদ্ধ মিথ্যা, যাহা উন্মাদের অত্যুক্তি, ভালোবাসার মুখে তাহ অবিসম্বাদিত প্রামাণিক কথা । ভালোবাসার আর-একটি গুণ এই যে, সে এককে আর করিয়া দেয়। ভিন্ন পদার্থের প্রভেদসীম। মানিতে চাহে না। পাঠক পূর্বেই তাহার উদাহরণ পাইয়াছেন ; দেখিয়াছেন একটা ছড়ায় কিছুমাত্র ভূমিকা না করিয়৷ খোকাকে অনায়াসেই পক্ষীজাতীয়ের শামিল করিয়া দেওয়৷ হইয়াছে— কোনো প্রাণীবিজ্ঞানবিৎ তাহাতে আপত্তি করিতে আসেন না । আবার পরমুহূর্তেই থোকাকে যখন আকাশের চন্দ্রের অভেদ আত্মীয়রূপে বর্ণনা করা হয় তখন কোনো জ্যোতিবিদ তাহার প্রতিবাদ করিতে সাহস