পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

·俄8 লোকসাহিত্য আর কী হইতে পারে! তথাপি পৃথিবীতে যেটুকু স্বৰ্গ আছে সে কেবল রমণীতে বালকে প্রেমিকে ভাবুকে মিলিয়া সমস্ত যুক্তি এবং নিয়মের প্রতিকুল ম্রোতেও ধরাতলে আবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছে। পৃথিবী যে পৃথিবীই এ কথা তাহারা অনেক সময় ভুলিয়া যায় বলিয়াই, সেই ভ্রমক্রমেই পৃথিবীতে দেবলোক স্থলিত হইয়া পড়ে"। ভালোবাসা এক দিকে যেমন প্রভেদসীমা লোপ করিয়া চাদে ফুলে খোকায় পাখিতে এক মুহূর্তে একাকার করিয়া দিতে পারে, তেমনি আবার আর-এক দিকে যেখানে সীমা নাই সেখানে সীমা টানিয়া দেয়, যেখানে আকার নাই সেখানে আকার গড়িয়া বসে । এ পর্যন্ত কোনো প্রাণীতত্ত্ববিৎ পণ্ডিত ঘুমকে স্তন্যপায়ী অথবা অন্য কোনো জীবশ্রেণীতে বিভক্ত করেন নাই। কিন্তু ঘুম নাকি থোকার চোখে আসিয়৷ থাকে, এইজন্য তাহার উপরে সর্বদাই ভালোবাসার স্বজনহস্ত পড়িয়া সেও কখন একটা মানুষ হইয়া উঠিয়াছে। হাটের ঘুম, ঘাটের ঘুম, পথে পথে ফেরে । চার কড়া দিয়ে কিনলেম ঘুম, মণির চোখে আয় রে । রাত্রি অধিক হইয়াছে, এখন তো আর হাটে ঘাটে লোক নাই। সেইজন্য সেই হাটের-ঘুম, ঘাটের-ঘুম নিরাশ্রয় হইয়া অন্ধকারে পথে পথে মানুষ খুঁজিয়া খুঁজিয়া বেড়াইতেছে। বোধ করি সেইজন্যই তাহাকে এত স্থলভ মূল্যে পাওয়৷ গেল। নতুবা সমস্ত রাত্রির পক্ষে চার কড়ার কড়ি এখনকার কালের মজুরির তুলনায় নিতান্তই যৎসামান্ত । শুনা যায় গ্রীক কবিগণ এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তও ঘুমকে স্বতন্ত্র মানবী রূপে বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু নৃত্যকে একটা নির্দিষ্ট বস্তুরূপে গণ্য করা কেবল আমাদের ছড়ার মধ্যেই দেখা যায় ।