পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

切ア8 লোকসাহিত্য তবে কী করবে এ মানে । মাধবের কত মান না হয় তার পরিমাণ, মানিনী হয়েছি যার মানে ॥ যে পক্ষে যখন বাড়ে অভিমান সেই পক্ষে রাখতে হয় সম্মান । রাখতে শু্যামের মান গেল গেল মান, আমার কিসের মান-অপমান ৷ এই কয়েক ছত্রের মধ্যে প্রেমের যেটুকু ইতিহাস যে ভাবে লিপিবদ্ধ হইয়াছে তাহাতে কৃষ্ণের উপরেও শ্রদ্ধা হয় না, রাধিকার উপরেও শ্রদ্ধা হয় না, চন্দ্রাবলীর উপরেও অবজ্ঞার উদয় হয়। কেবল নায়ক-নায়িকার অভিমান নহে, পিতামাতার প্রতি কন্যার অভিমানও কবিদলের গানে সর্বদাই দেখিতে পাওয়া যায়। গিরিরাজ-মহিষীর প্রতি উমার যে অভিমানকলহ তাহাতে পাঠকের বিরক্তি উদ্রেক করে না— তাহা সর্বত্রই সুমিষ্ট বোধ হয়। তাহার কারণ, মাতৃস্নেহে উমার যথার্থ অধিকার সন্দেহ নাই ; কন্যা ও মাতার মধ্যেএই-যে আঘাত ও প্রতিঘাত তাহাতে স্নেহসমুদ্র স্বন্দরভাবে তরঙ্গিত হইয়া উঠে। মাতা-কন্যা এবং নায়ক-নায়িকার মান-অভিমান যে কবিদলের গানের প্রধান বিষয়, পূর্বেই বলিয়াছি তাহার একটা কারণ বাঙালির প্রকৃতিতে অভিমানটা কিছু বেশি, অর্থাৎ অন্যের প্রেমের প্রতি স্বভাবতই তাহার দাবি অত্যন্ত অধিক ; এমন-কি, সে প্রেম অপ্রমাণ হইয়া গেলেও ইনিয়া-বিনিয়া কাদিয়া-রাগিয়া আপনার দাবি সে কিছুতেই ছাড়ে না— আর-একটা কারণ, এই মান-অভিমানে উত্তর-প্রত্যুত্তরের তীব্রতা এবং জয়-পরাজয়ের উত্তেজন রক্ষিত হয়। কবিওয়ালাদের গানে সাহিত্যরসের স্বষ্টি অপেক্ষ ক্ষণিক উত্তেজনাউদ্রেকই প্রধান লক্ষ্য।