পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bわ* লোকসাহিত্য ‘পাবনা থেকে আনি দিব টাকা-দামের মোটরি’, তখন ক্ষণকালের জন্য মনের মধ্যে বড়ো একটা আশ্বাস অকুভব করা গেল । মোটরি পদার্থটি কী তাহ ঠিক জানি না, কিন্তু তাহার মূল্য যে এক টাকার বেশি নহে কবি তাহাতে সন্দেহ রাখেন নাই। জগতের এক প্রান্তে পাবনা জিলায় যে এমন একটা স্থান আছে যেখানে প্রতিকূল প্রণয়িনীর জন্য অসাধ্যসাধন করিতে হয় না, পাবনা অপেক্ষ দুর্গম স্থানে যাইতে এবং ‘মোটরি’ অপেক্ষ দুর্লভ পদার্থ সংগ্ৰহ করিতে হয় না, ইহা মনে করিলে ভবযন্ত্রণ অপেক্ষাকৃত স্বসহ বলিয়া বোধ হয় । কালিদাস ভবভূতি প্রভৃতি প্রথম শ্রেণীর কবিরা এমন স্থলে নিশ্চয়ই মানসসরোবরের স্বর্ণপদ্ম, আকাশের তারা এবং নন্দনকাননের পারিজাত অম্লানমুখে হাকিয়া বসিতেন। এবং উজ্জয়িনীর প্রথম শ্রেণীর যুবতীর শিখরিণী ও মন্দাক্রাস্তাচ্ছন্দে এমন দুঃসাধ্য অনুষ্ঠানের প্রস্তাবমাত্র শুনিলে প্রসন্ন না হইয়া থাকিতে পারিতেন না । অন্তত কাব্য পড়িয়া এইরূপ ভ্রম হয়। কিন্তু অবিশ্বাসী গদ্যজীবী লোকেরা এতটা কবিত্ব বিশ্বাস করে না। শুদ্ধমাত্র মন্ত্রপাঠের দ্বারা এক পাল ভেড়া মারা যায় কি না এ প্রশ্নের উত্তরে ভলটেয়ার বলিয়াছেন, যায়, কিন্তু তাহার সঙ্গে সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে আর্সেনিক বিষও থাকা চাই। মন-ভারী-করা যুবতীর পক্ষে অকাশের তারা, নন্দনের পারি জাত এবং প্রাণসমর্পণের প্রস্তাব সন্তোষজনক হইতে পারে, কিন্তু অধিকাংশ স্থলেই তাহার সঙ্গে সঙ্গে বাজুবন্ধ বা চরণচক্রের প্রয়োজন হয়। কবি ঐ কথাটা চাপিয়া যান ; তিনি প্রমাণ করিতে চান যে কেবল মন্ত্রবলে, কেবল ছন্দ এবং ভাবের জোরেই কাজ সিদ্ধ হয়— অলংকারের প্রয়োজন হইতে পারে, কিন্তু তাহা কাব্যালংকারের। এ দিকে আমাদের পাবনার জনপদবাসিনীর কাব্যের আড়ম্বর বাহুল্য জ্ঞান করেন, এবং র্তাহীদের চিরাচুরক্ত গ্রামবাসী কবি মন্ত্রতন্ত্র বাদ দিয়া একেবারেই সোজা টাকাদামের মোটরির কথাটা পাড়িয়া বসেন ; সময় নষ্ট করেন না ।