পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S২ লোকসাহিত্য যে ছড়া রচনা করিয়াছে তাহাকে এক হিসাবে মুকুন্দরামের সমসাময়িক বলা যায় ; কারণ, গ্রামের প্রাণটি যেখানে ঢাকা থাকে কালস্রোতের ঢেউগুলি সেখানে তেমন জোরের সঙ্গে ঘ দিতে পারে না । গ্রামের জীবনযাত্রা এবং সেই জীবনযাত্রার সঙ্গী সাহিত্য, বহুকাল বিনা পরিবর্তনে একই ধারায় চলিয়৷ আসে । কেবল সম্প্রতি অতি অল্পদিন হইল ‘আধুনিক কাল দূরদেশাগত নবীন জামাতার মতো নূতন চাল-চলন লইয়া পল্লীর অন্তঃপুরেও প্রবেশ করিয়াছে। গ্রামের মধ্যেও পরিবর্তনের হাত পড়িয়াছে। এজন্য গ্রাম্য ছড়া-সংগ্রহের ভার যাহারা লইয়াছেন তাহারা আমাকে লিখিতেছেন— ‘প্রাচীন ভিন্ন আজকালকার মেয়েদের কাছে এইরূপ কবিতা শুনিবার প্রত্যাশা নাই। তাহারা ইহা জানে না এবং জানিবার কৌতুহলও রাখে না। বৰ্ষীয়সী স্ত্রীলোকের সংখ্যা খুব কম। তাহদের মধ্যেও অনেকে উহা জানেন না। দুই-একজন জানিলেও সকলে জানেন না। সুতরাং পাচটি ছড়া সংগ্ৰহ করিতে হইলেই পাচ গ্রামের পাঁচজন বৃদ্ধার আশ্রয় লইতে হয়। এ দেশের পুরাতন বৈষ্ণবীগণের দুই-একজন মাঝে মাঝে এইরূপ কবিতা বলিয়া ভিক্ষা করে দেখিতে পাই। তাহদের কথিত ছড়াগুলির সমস্তই রাধাকৃষ্ণের প্রেমবিষয়ক । এইরূপ বৈষ্ণবী সচরাচর মেলে না এবং মিলিলেও অনেকেই একবিধ ছড়াই গাহিয়া থাকে। এমন স্থলে একাধিক নূতন ছড়া সংগ্ৰহ করিতে হইলে অপেক্ষাকৃত বহু বৈষ্ণবীর সাহায্য আবশ্বক। তবে শস্যশ্যামলা মাতৃভূমির কৃপায় প্রতি সপ্তাহে অন্তত দু-একটি বিদেশিনী নূতন বৈষ্ণবীর ‘জয় রাধে’ রব শুনিতে পাওয়া বড়ো কিছু আশ্চর্ষের বিষয় নহে। পূর্বে গ্রাম্য ছড়াগুলি গ্রামের সম্রাস্ত বংশের মেয়েদেরও সাহিত্যরস-তৃষ্ণ মিটাইবার জন্য ভিখারিনী ও পিতামহীদের মুখে মুখে ঘরে ঘরে প্রচারিত হইত। এখন তাহার। অনেকেই পড়িতে শিখিয়াছেন ; বাংলার ছাপাখানার সাহিত্য