পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রাম্যসাহিত্য 氹 সমাজের মর্মরূপিণী রমণীর এক সজীব অাদর্শে গঠিত হইয়াছে। স্বামী দীন দরিদ্র বৃদ্ধ বিরূপ যেমনই হউক, স্ত্রী রূপযৌবন-ভক্তিপ্রীতি-ক্ষমাধৈর্ধ-তেজগর্বে সমুজ্জলা। স্ত্রীই দরিদ্রের ধন, ভিখারির অন্নপূর্ণ, রিক্ত গৃহের সম্মানলক্ষ্মী। হরগৌরীর গান যেমন সমাজের গান, রাধাকৃষ্ণের গান তেমনি সৌন্দর্ষের গান। ইহার মধ্যে যে অধ্যাত্মতত্ত্ব অাছে তাহা আমরা ছাড়িয়া দিতেছি। কারণ, তত্ত্ব যখন রূপকের ছদ্মবেশ ধারণ করিয়া সাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে চেষ্টা করে তখন তো সে আপন তত্ত্বরূপ গোপন করে। বাহরূপেই সে সাধারণের হৃদয় অাকর্ষণ করিয়া থাকে। রাধাকৃষ্ণের রূপকের মধ্যে এমন একটি পদার্থ আছে যাহা বাংলার বৈষ্ণব অবৈষ্ণব তত্ত্বজ্ঞানী ও মূঢ় সকলেরই পক্ষে উপাদেয়, এইজন্যই তাহা ছড়ায় গানে যাত্রায় কথকতায় পরিব্যাপ্ত হইতে পারিয়াছে । সৌন্দর্যসূত্রে নরনারীর প্রেমের আকর্ষণ সকল দেশের সাহিত্যেই প্রচারিত। কেবল সামাজিক কর্তব্যবন্ধনে ইহাকে সম্পূর্ণ কুলাইয়া পায় না। সমাজের বাহিরেও ইহার শাসন বিস্তৃত । পঞ্চশরের গতিবিধি সর্বত্রই, এবং বসন্ত অর্থাৎ জগতের যৌবন এবং সৌন্দর্য র্তাহার নিত্য-সহচর। নরনারীর প্রেমের এই যে একটি মোহিনী শক্তি আছে, যে শক্তিবলে সে মুহূর্তের মধ্যে জগতের সমস্ত চন্দ্রস্থর্যতারা পুষ্পকানন নদনদীকে এক স্থত্রে টানিয়া মধুরভাবে উজ্জ্বলভাবে আপনার চতুর্দিকে সাজাইয়া আনে, ষে প্রেমের শক্তি আকস্মিক অনির্বচনীয় আবির্ভাবের দ্বারা এতদিনকার বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত উপেক্ষিত বিশ্বজগৎকে চক্ষের পলকে সম্পূর্ণরূপে কৃতকৃতাৰ্থ করিয়া তোলে— সেই শক্তিকে যুগে যুগে দেশে দেশে মনুষ্য অধ্যাত্মশক্তির রূপক বলিয়া অনুভব ও বর্ণনা করিয়াছে। তাহার প্রমাণ সলোমন, হাফেজ এবং বৈষ্ণব কবিদের পদাবলী । দুটি মমুন্যের প্রেমের মধ্যে এমন একটি বিরাট বিশ্বব্যাপকতা আছে যে আধ্যাত্মিক ভাবুকদের মনে হয়, সেই প্রেমের সম্পূর্ণ অর্থ সেই দুইটি মকুন্যের