পাতা:শকুন্তলা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮৭৫).pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম পরিচ্ছেদ।
১০৩

মা করিয়া তাঁহার নিকটে উপস্থিত হইল এবং জিজ্ঞাসিল, মা! ও কে, ওকে দেখে তুই কাঁদিস্ কেন? তখন শকুন্তলা গদগদ বচনে কহিলেন, বাছা! ও কথা আমায় জিজ্ঞাসা কর কেন? আপন অদৃষ্টকে জিজ্ঞাসা কর।

 কিয়ৎ ক্ষণ পরে, রাজা মনের আবেগ সংবরণ করিয়া শকুন্তলাকে কহিলেন, প্রিয়ে! আমি তোমার প্রতি যে অসদ্ব্যবহার করিয়াছি, তাহা বলিবার নয়। তৎকালে আমার মতিচ্ছন্ন ঘটিয়াছিল, তাহাতেই অবমাননা করিয়া তোমায় বিদায় করিয়াছিলাম। কয়েক দিবস পরেই, আমার সকল বৃত্তান্ত স্মরণ হইয়াছিল; তদবধি আমি কি অসুখে কালহরণ করিয়াছি, তাহা আমার অন্তরাত্মাই জানেন। পুনর্বার তোমার দর্শন পাইব, আমার সে আশা ছিল না। এক্ষণে তুমি, প্রত্যাখ্যানদুঃখ পরিত্যাগ করিয়া, আমার অপরাধ মার্জ্জনা কর।

 রাজা এই বলিয়া, উন্মুলিত তরুর ন্যায়, ভূতলে পতিত কইলেন। তদ্দর্শনে শকুন্তলা আস্তে ব্যস্তে রাজার হস্তে ধরিয়া কহিলেন, আর্য্যপুত্র! উঠ উঠ, তোমার দোষ কি, আমার অদৃষ্টের দোষ। এত দিনের পর দুঃখিনীকে যে স্মরণ করিয়াছ, তাহাতেই আমার সকল দুঃখ দূর হইয়াছে। এই বলিতে বলিতে শকুন্তলার চক্ষে ধারা বহিতে লাগিল। রাজা গাত্রোত্থান করিয়া বাষ্পপূর্ণ নয়নে কহিতে লাগিলেন, প্রিয়ে! প্রত্যাখ্যান কালে তোমার