পাতা:শকুন্তলা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮৭৫).pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
শকুন্তলা।

নয়নযুগল হইতে যে জলধারা বিগলিত হইয়াছিল, তাহা উপেক্ষা করিয়াছিলাম, পরে সেই দুঃখে আমার হৃদয় বিদীর্ণ হইয়া গিয়াছিল। এক্ষণে তোমার চক্ষের জলধারা মুছিয়া দিয়া সকল দুঃখ দূর করি। এই বলিয়া, স্বহস্তে শকুন্তলার চক্ষের জল মুছিয়া দিলেন। শকুন্তলার শোকসাগর আরও উথলিয়া উঠিল; দ্বিগুণ প্রবাহে নয়নে বারিধারা বহিতে লাগিল। অনন্তর দুঃখাবেগ সংবরণ করিয়া, শকুন্তলা রাজাকে কহিলেন, আর্য্যপুত্র! তুমি যে এই দুঃখিনীকে পুনরায় স্মরণ করিবে, সে আশা ছিল না। কি রূপে আমি তোমার স্মৃতিপথে পতিত হইলাম, ভাবিয়া স্থির করিতে পারিতেছি না। তখন রাজা কহিলেন, প্রিয়ে! তৎকালে। তুমি আমায় যে অঙ্গুরীয় দেখাইতে পার নাই, কয়েক দিবস পরে উহা আমার হস্তে পড়িলে, আদ্যোপান্ত সমস্ত বৃত্তান্ত আমার স্মৃতিপথে আরূঢ় হয়। এই সেই অঙ্গুরীয়। এই বলিয়া, স্বীয় অঙ্গুলিস্থিত সেই অঙ্গুরীয় দেখাইয়া, পুনর্বার শকুন্তলার অঙ্গুলিতে পরাইয়া দিবার চেষ্টা করিলেন। তখন শকুন্তলা কহিলেন, আর্যপুত্র! আর আমার ও অঙ্গুরীয়ে কাজ নাই; ওই আমার সর্ব্বনাশ করিয়াছিল; ও তোমার অঙ্গুলিতেই থাকুক।

 উভয়ের এইরূপ কথোপকথন হইতেছে, এমন সময়ে মাতালি আসিয়া প্রফুল্ল বদনে কহিলেন, মহারাজ! এত দিনের পর আপনি যে ধর্মপত্নীসহিত সমাগত হইলেন, ইহাতে আমরা