পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/১৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯ অনেকদিন কাটিয়াছে। মাঘ শেষ হইয়া ফান্ধন আসিয়া পড়িল, চরণ সেই যে গিয়াছে আর আসিল না। তাহাকে যে জোর করিয়া আসিতে দেওয়া হয় না, ইহা অতি স্বম্পষ্ট। অর্থাৎ কোনরূপ সম্বন্ধ আর র্তাহারা বাঞ্ছনীয় মনে করেন না। ওদিকের কোন সংবাদ নাই, সেও আর কখনও চিঠিপত্র লিখিয়া নিজেকে অপমানিত করিবে না প্রতিজ্ঞ করিয়াছিল । দাদার সেই একই ভাব—সৰ্ব্বরকমেই প্রাণ যেন কুস্কমের বাহির হইবার উপক্রম হইতে লাগিল। সেই অবধি প্রকাতে বাটীর বাহির হওয়া কিংবা পূর্বের ন্যায় সঙ্গিনীদের সহিত দেখা-সাক্ষাৎ করিতে যাওয়াও বন্ধ করিয়াছে। রাত্রি থাকিতেই নদী হইতে স্নান করিয়া জল লইয়া আসে, হাটের দিন গোপালের মা হাট-বাজার কন্ধিয়া দেয়,—এমনি করিয়া বাহিরের সমস্ত সংস্রব হইতে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করিয়া লইয়া, তাহার গুরুভারাক্রান্ত স্বদীর্ঘ দিনরাত্রিগুলি যথার্থই বড় দুঃখে কাটিতেছিল। সে খুব ভাল হচের কাজ করিতে পারিত। যে যাহা পারিশ্রমিক দিত, তাহাই হাসিমুখে গ্রহণ করিত এবং কেহ দিতে ভুলিয়া গেলে সেও ভুলিয়া যাইত। এই সমস্ত মহৎ গুণ থাকায় পাড়ার অধিকাংশ মশারি, বালিশের আড়, বিছানার চাদর সে-ই সিলাই করিত। আজ অপরাহ্ল-বেলায় নিজের ঘরের স্বমুখে মাদুর পাতিয়া একটা অৰ্দ্ধ-সমাপ্ত মশারি শেষ করিতে বসিয়াছিল। হাতের স্থচ অচল হইয়া বুহিল, লে সেই প্রথম দিনের আগাগোড়া ঘটনা লইয়া নিজের মনে খেলা করিতে লাগিল । যেদিন তাহার সদলবলে পলাতক দাদার নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে আসিয়াছিলেন এবং বড় দায়ে ঠেকিয় তাহাকে লজ্জা-সরম বিসর্জন দিয়া মুখরার মত প্রথম স্বামী-সম্ভাষণ করিতে হইয়াছিল—সেইসব কথা । দুঃখ তাহার যখনই অসহ্য হইয়া উঠিত, তখনই সে সব কাজ ফেলিয়া রাখিয়া এই স্থতি লইয়া চুপ করিয়া বসিত। মা যেমন তাহার একমাত্র শিশুকে লইয়া নানাভাবে নাড়াচাড়া করিয়া ক্রীড়াচ্ছলে উপভোগ করেন, সেও তাহার এই একটিমাত্র চিন্তাকেই অনিৰ্ব্বচনীয় প্রীতির সহিত নানা দিক হইতে তোলপাড় করিয়া দেখিয়া অসীম তৃপ্তি অনুভব করিত। তাহার সমস্ত দুঃখ তখনকার মত যেন ধুইয়া মূছিয়া যাইত। দু'জনের সেই বাদ-প্রতিবাদ, অপর সকলকে লুকাইয়া আহারের আয়োজন, তার পরে রাধিয়া বাড়িয়া পরিবেশন করিয়া স্বামীদেবরদিগকে খাওয়ানো, শাশুড়ীর সেবা, সকলের শেষে দিনান্তে নিজের জন্ত সেই অবশিষ্ট শুষ্ক শীতল যা হোক কিছু । তাহার চোখ দিয়া টপ টপ, করিয়া জল পড়িতে লাগিল । নারীদেহ ধরিয়া ইহাপেক্ষ অধিক স্থখ সে ভাবিতেও পারিত না, কামনাও করিত না । তাহার মনে yళీs