পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/২৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ অসাবধানে কপাটের কড়া নাড়িয়া উঠিতেই কুষম চাহিয়া দেখিল, এবং সরিয়া আসিয়া দ্বার খুলিয়া দিয়া বলিল, ভেতরে এসে । বৃন্দাবন ভিতরে আসিতেই সে দ্বার অর্গারুদ্ধ করিয়া দিয়া স্থমূখে আসিয়া দাড়াইল। হয়ত সে প্রকৃতিস্থ নয়, উন্মত্ত নারী কি কাণ্ড করিবে সন্দেহ করিয়া বৃন্দাবনের বুক কঁাপিয়া উঠিল। কিন্তু কুস্কম অসম্ভব কাও কিছুই করিল না, গলায় আঁচল দিয়া উপুড় হইয়া পড়িয়া স্বামীর দুই পায়ের মধ্যে মুখ ঢাকিয়া স্থির হইয়া পড়িয়া রহিল। বৃন্দাবন ভয়ে নড়িতে-চড়িতে সাহস করিল না, স্থির হইয়া দাড়াইয়া রহিল। কুয়ম বন্ধক্ষণ ধরিয়া ওই দুই পায়ের ভিতর হইতে যেন শক্তি সংগ্ৰহ করিতে লাগিল, বহুক্ষণ পরে উঠিয়া বসিয়া মুখপানে চাহিয়া বড় করুণ-কণ্ঠে বলিল, সবাই বলে, তুমি সইতে পেয়েচ ; কিন্তু আমার বুকের ভেতর দিবানিশি হু হু করে জলে যাচ্চে, আমি বঁচিব কি করে ! তোমাকে রেখে আমি মরবই বা কি করে ? দু'জনের এক জালা। বৃন্দাবনের বিদ্বেষ-বহ্নি নিবিয়া গেল, সে হাত ধরিয়া তুলিয়া বলিল, কুমম, আমি যাতে শাস্তি পেয়েছি, তুমিও তাতে পাবে—সে ছাড়া জার পথ নেই। কুক্কম চুপ করিয়া চাহিয়া রহিল। বৃন্দাবন বলিতে লাগিল, চরণকে যে তুমি কত ভালবাসতে তা আমি জানি কুস্কম। তাই তোমাকেও এ পথে ডাকছি। সে তোমার মরেনি, হারায়নি, শুধু লুকিয়ে আছে—একবার ভাল করে চেয়ে দেখতে শিখলেই দেখতে পাবে—যেখানে যত ছেলেমেয়ে আছে, আমার চরণও তাদের সঙ্গে আছে। - এতক্ষণে কুমুমের চোখ দিয়া জল গড়াইয়া পড়িল, সে আর একবার নত হইয়া স্বামীর পায়ে মুখ রাখিল। ক্ষণকাল পরে মুখ তুলিয়া বলিল, আমি তোমার সঙ্গে যাব। বৃন্দাবন সভয়ে বলিল, আমার সঙ্গে । সে অসম্ভব। খুব সম্ভব। আমি যাব। বৃন্দাবন উৎকণ্ঠিত হইয়া বলিল, কি করে যাবে কুসুম, আমি তোমাকে প্রতিপালন করব কি করে । আমি নিজের জন্তু ভিক্ষে করতে পারি, কিন্তু তোমার জন্ত ত পাবিনে । তা ছাড়া তুমি ইটবে কি করে ? কুক্কম অবিচলিত-স্বরে কহিল, আমিও খুব হাটতে পারি—হেঁটেই এসেচি। তা ছাড়া ভিক্ষা করতে তোমাকে আমি দেব না, তা সে আমার জন্তই হোক, জার তোমার নিজের জন্তই হোক। তুমি শুধু তোমার কাজ করে যেয়ে, আমি উপায় করতেও জানি, সংসার চালাতেও জানি। দাদার সংসার এতদিন আমিই চালিয়ে এসেছি । 》