পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ হারাণ মুখুয্যের সংসারে আজকাল কষ্টনাই বলিলেই হয় । খাওয়া-পরা বেশ চলিয়া যাইতেছে, কিন্তু পাড়ার পাঁচজনে কথা বলিতে লাগিল । কেহ বলিল, হারাণে বেটা নন্দীদের ঢের টাকা মারিয়াছে ; কেহ বলিল, বেটা আজকাল একটা বড়লোক। কেহ বলিল, কিছুই নাই—বাড়িতে দু'বেল, হাড়ি চড়ে না। এমনি অনেক কথা হইত। যাহার পর তাহার একটু কম কৌতুহলী হইয়া রহিল, যাহারা একটু আত্মীয় তাহারা অধিক কৌতুহলী হইয়া মুখোপাধ্যায়-পরিবার সম্বন্ধে অল্প-বিস্তর ছিদ্র খুজিয়া বাহির করিবার চেষ্টা করিতে লাগিল । একদিন দুপুরবেলা কৃষ্ণঠাকুরাণী সহসা আবিভূত হইয়া বলিলেন, বলি বোঁয়ের কি হচ্ছে ? খাওয়া-দাওয়া চুকল কি ? শুভদা বলিল, ই, এইমাত্র । তখন কৃষ্ণঠাকুরাণী পানের সহিত তামাকপত্র চর্বণ করিতে করিতে এবং পিক ফেলিতে ফেলিতে উপযুক্ত স্থানে উপবেশন করিয়া বলিলেন, বেী, হারাণ আজকাল কচে কি ? কি আর করবেন—চাকরি-বাকরির চেষ্টা কচ্চেন। সংসার চলচে কেমন করে ? শুভদা উত্তর করিল না । কৃষ্ণঠাকুরাণী আবার বলিলেন, লোকে বলে হারাণ মুখুয্যে নন্দীদের ঢের টাকা মেরেচে ; সে আজকাল বড়লোক—তার খাবার ভাবনা কি ? কিন্তু আমি ত সব কথা জানি, তাই বলি, সংসার এখন চলে কেমন করে ? শুভদা ইতস্ততঃ করিয়া বলিল, আমনি একরকম করে । হারামজাদ মাগী বামুলপাড়ার কাতি, সে-ই ত এই দুর্ঘটনা ঘটালে ; ইচ্ছা করে মুখপুড়ীকে পাশ পেড়ে কাটি। শুভদা একথা কানে না তুলিয়া বলিল, ঠাকুরবি, তোমার খাওয়া হয়েছে। ই বোন, হয়েছে। সেই হারামজাদীই ত এই সৰ্ব্বনাশ ঘটালে। হারাণ মুখ্য কি না, তাই তার ফদে পা দিলে। তিন হাজার টাকা চুরি করলি, না হয় দুশ'-একশ’ মাগের হাতেই এনে দিতিস! তবু ত কিছু থাকত ? শুভদা বলিল, ঠাকুরবি, আজ কি রাধলে ? কি আর রণধব বোন ? আজ বেলা হয়ে গিয়েছিল, তাই ভাতে-ভাত ছাড়া আর কিছুই করিনি। তা মাগীর কি ছাই একটু পরকালের ভাবনাও আছে ? মিনসে দুটো টাকার জন্যে যখন হাতে-পায়ে ধরলে, তখন কি না ঘর থেকে বের করে দিলে! কিন্তু ভগবান কি নেই ? বামুনের যেমন সৰ্ব্বনাশ করেচে, তোর মতন সতীলক্ষ্মীর