পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রই সতীশ অস্তরের দ্বন্দ্ব থামাইয়া রাখিয়া ভালমামুষের মত প্রশ্ন করিল, লুচি বেলতে পারি সে-কথা কি আমার গায়ে লেখা আছে বৌঠাকরুণ ? কিরণময়ী বলিল, লেখা পড়তে জানা চাই ঠাকুরপো । সে-রাত্রে আমার গায়েতেই কি কিছু লেখা ছিল—অথচ তুমি পড়েছিলে! সতীশ আবার মুখ হেঁট করিল। রান্নাঘরে গিয়া প্রথমে এমনিধারা ঠোকাঠুকি এবং তার পরে দুজনে মিলিয়া খাবার তৈয়ারীর মধ্যে যখন এই সংঘর্ষের উত্তাপ অনেকটা শীতল হইয়া গেল, তখন কিরণময়ী জিজ্ঞাসা করিল, তোমার অনেক কথাই তোমার উপীনদার মুখে শুনেচি। আচ্ছ। ঠাকুরপো, তিনি এখন এখানে নেই বুঝি ? বাড়ি ফিরে গেছেন, না ? সতীশ, ‘ই’ বলিলে, কিরণময়ী কহিল, আমি জানি, তিনি এখানে নেই, কিন্তু মা বিশ্বাস করতে চান না! মা বলেন, তাকে না জানিয়ে উপীনবাবু কখনই যাবেন না— র্তাকে বুঝি হঠাৎ যেতে হয়েছে ? সতীশ ঠিক জানিত না । বস্তুত সে কিছুই জানিত না । ইতিমধ্যে ইহাদিগকে উপলক্ষ্য করিয়া দুই বন্ধুতে যে-সকল অপ্রিয় কথা হইয়া গেছে, তাহাও বলা যায় না—সতীশ চুপ করিয়া রহিল। র্তাহার না বলিয়া চলিয়া যাইবার কারণ সে কিছুই অনুমান করিতে পারিল না। কিন্তু কিরণময়ী কথা চাপা পড়িতে দিল না, কহিল, কাজটা তোমার দাদার ভাল হয়নি ঠাকুরপো, জানিয়ে গেলে কেউ তাকে ধরে রাখত না, অথচ, মা এমন ভেবে সারা হতেন না । আমি কোন রকমেই তাকে বোঝাতে পারিনে যে, উপেনবাবু চিরকাল এ দেশেই থাকেন না ; অন্যত্র তার ঘর-বাড়ি আছে, কাজ-কৰ্ম্ম আছে—এ-সমস্ত ছেড়ে কতদিন মানুষে পরের দুর্ভাগ্য নিয়ে আটকে থাকতে পারে? কিন্তু বুড়োমানুষের কাছে কোন যুক্তিই যুক্তি নয়—র্তাদের নিজের প্রয়োজনের বাড়া সংসারে আর কিছু তারা দেখতেই পান না । সতীশ সে-কথার ঠিক জবাব না দিয়া বলিল, উপীনদা এতদিন বাইরে ছিলেন, এই ত আশ্চৰ্য্য ! কোথাও বেশীদিন থাকা তার স্বভাব নয়। বিশেষ, বিয়ের পর থেকে একটা রাতও কোথাও রাখতে হলে মাথা-খোড়াখুড়ি করতে হয় । আগে সমস্ত বিষয়েই তিনি আমাদের কর্তা ছিলেন, এখন একে একে সব ছেড়ে দিয়ে ঘরের কোণ নিয়েচেন—আদালতে নিতান্তই না গেলে নয়, তাই বোধ করি একটিবার যান। এই একবার দেখুন না— বে বাধা দিয়া বলিল, বসে ঠাকুরপো, তোমার খাবার জায়গা করে দিয়ে বলি। তুমি খেতে খেতে গল্প করবে, সেই বেশ হবে। বলিয়া আসন পাতিয়া থালের "שלל