পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রই ভাঞ্জার কহিলেন, যাচ্চি। কিন্তু তুমিও ভুল করলে। এ-সব আমি দিইনি, সমস্তই তোমার নিজের। তবুও কেন যে আমি না নিলে গরীব-দুঃখীকে বিলিয়ে দেবে, বুঝতে পারলুম না। আমাকে মাপ কর কিরণ। কিরণময়ী ধমকাইয়া উঠিল—আবার নাম করে ! ই, ওগুলো আমার জিনিসই বটে, কিন্তু ঐ-গুলোর মায়াতেই আপনার সাহায্য নিয়েছিলুম।—রাত ঢের হলো যে ডাক্তারবাৰু। ডাক্তার নিজের নাম-ছাপানো একখণ্ড কার্ড বাহির করিয়া বলিলেন, আমার বাড়ির ঠিকানাটা— , . দিন,—বলিয়া কিরণময়ী হাত বাড়াইয়া গ্রহণ করিল এবং পিছাইয়া জলস্ত উনানে উহা নিক্ষেপ করিয়া বলিল, এর বেণী আমার আবশ্যক হবে না। আপনি এইমাত্র ক্ষমা চাইছিলেন না ? আপনাকে সম্পূর্ণ ক্ষমা করতে পারব বলেই আপনার সমস্ত ঋণ, সমস্ত সম্বন্ধ, নিঃশেষ করে দিলুম। কোনদিন কোন কারণে যেন আপনাকে আমার মনে না পড়ে, যাবার সময় শুধু এই কথা বলে যান। আর কোনরূপ প্রশ্নোত্তরের অপেক্ষ না করিয়াই সশব্দে কবাট বন্ধ করিয়া দিয়া তাহার রান্নার জায়গায় ফিরিয়া আসিয়া বসিল । বাহিরে ডাক্তারের পায়ের শব্দ যখন তাহার কানে দূরে চলিয়া গেল, তখন সে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া চাহিয়া দেখিল, উকুন নিবিয়া গিয়াছে। ফু দিয়া জালিয়া দিয়া আর একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া চুপ করিয়া বসিল । তৃষ্ণায় গলা শুকাইয়া গেছে, তথাপি সে উঠিতে পারিল না। তাহার মনে হইতে লাগিল, বাহিরের অন্ধকারে তখনও কি একটা আতঙ্ক যেন তাহারই জন্ত হাত বাড়াইয়া অপেক্ষা করিয়া আছে। বুকের ভিতরটা এমনি অশাস্ত হইয়া উঠিল যে, দুই বাহু দিয়া সজোরে চাপিয়া রাখিল । এই বিদায়ের পালাট একদিন তাহাকে সমাপন করিতেই হইবে, ইহা সে নিশ্চয় জানিত, কারণ আগাছা তাহার সৰ্ব্বদেহে মূল বিস্তার করিয়া তাহাকে নিরস্তর আচ্ছন্ন করিতেছে এ-কথা সে যতই মনে করিয়াছে, ততই মন তাহার তিক্ত বিষাক্ত হইয়া উঠিয়াছে, তথাপি এই বীভৎস বন্ধন-পাশ হইতে নিজেকে মুক্ত করিয়া লইবার মত জোর সে নিজের মধ্যে কিছুতেই খুজিয়া পায় নাই। এমনি করিয়া দিন বহিয়া গিয়াছে—অমৃক্ষণ সহ করিয়াছে, কিন্তু কিছুই করিতে পারে নাই। সেই এতবড় শক্ত কাজটা যে কত সহজে হইয়া গেল, তাহাই কিরণময়ী চুপ করিয়া বসিয়া অন্তরে অনুভব করিতে লাগিল। প্রয়োজনের অনুরোধে যে-পাপ নিজের ঘরে ডাকিয়া জানিয়া বড় করিয়াছে, সে যে আজ যাও বলিতেই গেল, এমন অসম্ভব কেমন করিয়া হইল। ❖:ፀ