পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐীকান্ত ভয় পাইয়া একটা নাড়া দিয়া বলিলাম, ও কি । রাজলক্ষ্মী চোখ মেলিয়া চাহিল, একটু হাসিয়া কহিল, কৈ ন!—কিছু ত নয়! তাহার এই হাসিটাও আজ যেন আমার কেমনধারা লাগিল। $$. পরদিন আমার অনিচ্ছায় যাওয়া ঘটিয়া উঠিল না। কিন্তু পরের দিন আর ঠেকাইয়া রাখা গেল না, মুরারিপুর আখড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করিতেই হইল। রাজলক্ষ্মীর বাহন রতন, সে নহিলে কোথাও পা বাড়ানো চলে না, কিন্তু রান্নাঘরের দাসী লালুর মাও সঙ্গে চলিল। কতক জিনিসপত্র লইয়া রতন ভোরের গাড়িতে রওনা হইয়া গিয়াছে, সেখানকার স্টেশনে নামিয়া সে খান-দুই ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করিয়া রাখিবে । আবার আমাদের সঙ্গের মোটঘাট যাহা বাধা হইয়াছে তাহাও কম নয় । প্রশ্ন করিলাম, সেখানে বসবাস করতে চললে নাকি ? রাজলক্ষ্মী বলিল, দু-একদিন থাকব না ? দেশের বনজঙ্গল, নদীনালা, মাঠঘাট তুমি একলা দেখে আসবে, আর আমি কি সে-দেশের মেয়ে নই? আমার দেখতে সাধ যায় না ? তা যায় মানি, কিন্তু এত জিনিসপত্র, এত রকমের খাবার-দাবার আয়োজন— রাজলক্ষ্মী বলিল, ঠাকুরের স্থানে কি শুধুহাতে যেতে বলো? আর তোমাকে ত বইতে হবে না, তোমার ভাবনা কিসের ? ভাবনা যে কত ছিল সে আর বলিব কাহাকে ? আর এই ভয়টাই বেশী ছিল যে, বৈষ্ণব-বৈরাগীর ছোয়া ঠাকুরের প্রসাদ সে স্বচ্ছন্দে মাথায় তুলিবে কিন্তু মুখে তুলিবে না । কি জানি সেখানে গিয়া কোন একটা ছলে উপবাস শুরু করিবে, না রাধিতে বসিবে বলা কঠিন। কেবল একটা ভরসা ছিল মনটি রাজলক্ষ্মীর সত্যকার ভদ্র মন । অকারণে গায়ে পড়িয়া কাহাকেও ব্যথা দিতে পারে না। যদি-বা এসব কিছু করে, হাসিমুখে রহস্তে-কৌতুকে এমন করিয়াই করিবে যে আমি ও রতন ছাড়া আর কেহ বুঝিতেও পারিবে না। রাজলক্ষ্মীর দৈহিক ব্যবস্থায় বাহুল্যভার কোনকালেই নাই, তাহাতে সংযম ও উপবাসে সেই দেহটাকে যেন লঘুতার একটি দীপ্তি দান করিয়াছে। বিশেষ করিয়া তাহার আজিকার সাজসজ্জাটি হইয়াছে বিচিত্র। প্রত্যুষে স্নান করিয়া আসিয়াছে, গঙ্গার ঘাটে উড়েপাণ্ডার সযত্ন-রচিত অলকা তিলকা তাহার ললাটে, পরণে তেমনি নানা ফুলে-ফুলে লতায়-পাতায় বিচিত্র খয়ের রঙের বৃন্দাবনী শাড়ি, গায়ে সেই কয়টি অলঙ্কার, মুখের পরে স্নিগ্ধ-প্রসন্নতা—আপন মনে কাজে ব্যাপৃত। কাল গোটা-দুই লম্বা আয়ন লাগানে। আলমারি কিনিয়া আনিয়াছে, আজ যাইবার পূৰ্ব্বে তাড়াতাড়ি করিয়া কি সব তাহাতে সে গুছাইয়া তুলিতেছিল। কাজের সঙ্গে হাতের বালার হাঙ্গরের চোখ দুটো মাঝে মাঝে জলিয়া উঠিতেছে, হীরা ও পান্না বসানো গলার হারের > * >