পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রীকান্ত বিষয়ের আলোচনা বন্ধ কর । রাজলক্ষ্মী বলিল, তুমি জানো ছেলেবেলায় মা আমাকে এক মৈথিলী রাজপুত্রের হাতে বিক্ৰী করে দিয়েছিলেন ? ই, আর এক রাজপুত্রের মুখে খবরটা শুনেছিলাম অনেককাল পরে । সে ছিল আমার বন্ধু । রাজলক্ষ্মী বলিল, ই, তোমার বন্ধুরই বন্ধু ছিল সে। একদিন মাকে রাগ করে বিদায় করে দিলুম, তিনি দেশে ফিরে এসে রটালেন আমার মৃত্যু। এ খবর তো শুনেছিলে ? ই, শুনেছিলাম । শুনে তুমি কি ভাবলে ? ভাবলাম, আহা ! লক্ষ্মী মরে গেল ! এই ? আর কিছু না ? আরও ভাবলাম, কাশীতে মরে তবু যা হোক একটা সদগতি হ’লে । আহা ! রাজলক্ষ্মী রাগ করিয়া বলিল,—যাও—মিথ্যে আহা ! আহা ! করে তোমাকে দুঃখ জানাতে হবে না। তুমি একটা ‘আহাও' বলোনি আমি দিব্যি করে বলতে পারি। কই, আমাকে ছুঁয়ে বল ত ? বলিলাম, এতদিন আগেকার কথা কি ঠিক মনে থাকে ? বলেছিলাম বলেই যেন মনে পড়েচে । রাজলক্ষ্মী কহিল, থাক কষ্ট করে অতদিনের পুরানো কথা আর মনে করে কাজ নেই, আমি সব জানি। এই বলিয়া সে একটুখানি থামিয়া বলিল, আর আমি ? কেঁদে কেঁদে বিশ্বনাথকে প্রত্যহ জনাতুম, ভগবান আমার অদৃষ্টে এ তুমি কি করলে! তোমাকে সাক্ষী রেখে যার গলায় মালা দিয়েছিলুম এ জীবনে তার দেখা কি কখনো পাব না ? এমনি অশুচি হয়েই চিরকাল কাটবে ? সেদিনের কথা মনে পড়লে আজও আমার আত্মহত্যা করে মরতে ইচ্ছে করে । তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া ক্লেশ বোধ হইল, কিন্তু আমার নিষেধ শুনিবে না বুঝিয়া মৌন হুইয়া রহিলাম। এই কথাগুলি সে অস্তরে অস্তরে কতদিন কতভাবে তোলাপাড়া করিয়াছে, আপন অপরাধে ভারাক্রান্ত মনে নীরবে কত মৰ্ম্মাস্তিক বেদনাই সহ করিয়াছে, তবু প্রকাশ পাইতে ভরসা পায় নাই পাছে কি করিতে কি হইয়া যায়। এতদিনে এই শক্তি অর্জন করিয়া আসিয়াছে সে কমললতার কাছে। বৈষ্ণবী আপন প্রচ্ছন্ন কলুষ অনাবৃত করিয়া মুক্তি পাইয়াছে, রাজলক্ষ্মী নিজেও আজ ভয় ও মিথ্যা মৰ্য্যাদার শিকল ছিড়িয়া তাহারি মত সহজ হইয়া দাড়াইতে চাই, অদৃষ্টে তাহার স্বাহাই ○ aー