পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রীকান্ত আমার ত সাপে-নেউলে সম্পর্ক। আমাদের তবে চলে কি করে ? চলে সাপে-নেউলের মতই ! একালে প্রাণে বধ করায় হাঙ্গামা আছে, তাই একজন আর একজনকে বধ করে না, নিৰ্ম্মম হয়ে বিদায় করে দেয়, যখন আশঙ্কা হয় তার ধৰ্ম্মসাধনায় বিঘ্ন ঘটেচে। তারপরে কি হয় ? হাসিয়া বলিলাম, তারপরে সে নিজেই কাদতে কঁদিতে ফিরে আসে। নাকে খত দিয়ে বলে আমার অনেক শিক্ষা হয়েচে, এ জীবনে এত ভুল আর করব না, রইল আমার জপ-তপ, গুরু-পুরুত—আমাকে ক্ষমা কর । রাজলক্ষ্মী ও হাসিল, কহিল, ক্ষমা পায় ত ? পায়। কিন্তু তোমার গল্পের কি হ’লে ? রাজলক্ষ্মী কহিল, বলচি। ক্ষণকাল নিম্পলকচক্ষে আমার প্রতি চাহিয়া থাকিয়া বলিল, মা দেশে চলে গেলেন। আমাকে একজন বুড়ে ওস্তাদ গান-বাজনা শেখাতেন, লোকটি বাঙালী, এককালে সন্ন্যাসী ছিলেন, কিন্তু ইস্তফা দিয়ে আবার সংসারী হয়েছিলেন। তার ঘরে ছিল মুসলমান স্ত্রী, তিনি শেখাতে আসতেন আমাকে নাচ ! তাকে বলতুম আমি দাদামশাই—আমাকে সত্যিই বড় ভালোবাসতেন। কেঁদে বললুম, দাদামশাই, আমাকে তুমি বুক্ষে কর, এসব আর আমি পারব না। তিনি গরীব লোক, হঠাৎ সাহস করলেন না। আমি বললুম, আমার যে টাকা আছে তাতে অনেকদিন চলে যাবে। তারপর কপালে যা আছে হবে, এখন কিন্তু পালাই চলে। তারপরে তাদের সঙ্গে কত জায়গায় ঘুরুলুম— এলাহাবাদ, লক্ষেী, দিল্লী, আগর, জয়পুর, মথুরা–শেষে আশ্রয় নিলুম এসে পাটনায়। অৰ্দ্ধেক টাকা জমা দিলুম এক মহাজনের গদীতে, আর অৰ্দ্ধেক টাকা দিয়ে ভাগে খুললুম একটা মনোহারী আর একটা কাপড়ের দোকান। বাড়ি কিনে খোজ করে বন্ধুকে আনিয়ে নিয়ে দিলুম তাকে ইস্কুলে ভর্তি করে, আর জীবিকার জন্যে যা করতুম সে ত তুমি নিজের চোখেই দেখেচ। তাহার কাহিনী শুনিয়া কিছুক্ষণ স্তব্ধ হইয়া রহিলাম, তারপরে বলিলাম, তুমি বলেই অবিশ্বাস হয় না—আর কেউ হলে মনে হ’তে মিথ্যা বানানো একটা গল্প শুনচি মাত্র । রাজলক্ষ্মী বলিল, মিথ্যে বলতে বুঝি আমি পারিনে ? বলিলাম, পার হয়ত, কিন্তু আমার কাছে আজও বলেনি বলেই আমার বিশ্বাস । এ বিশ্বাস কেন ? কেন ! তোমার ভয় মিথ্যে ছলনায় পাছে কোন দেবতা রুষ্ট হন । তোমাকে እ እዩ