পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রীকান্ত উঠবেই, খন্দেরের সঙ্গে লাঠালাঠি না লাগলে বাচি । তবে একটা কাপড়ের দোকান কর ? তার চেয়ে একটা জ্যাস্ত বাঘ-ভালুকের দোকান করে দাও, সে বরঞ্চ চালানো সহজ হবে । রাজলক্ষ্মী হাসিয়া ফেলিল, বলিল, একমনে এত আরাধনা করে কি শেষে ভগবান এমনি একটা অকৰ্ম্ম মানুষ আমাকে দিলেন, যাকে নিয়ে সংসারে এতটুকু কাজ চলে না । বলিলাম, আরাধনার ক্রটি ছিল । সংশোধনের সময় আছে, এখনো কৰ্ম্মঠ লোক তোমার মিলতে পারে । বেশ স্বপুষ্ট নীরোগ বেঁটেখাটো জোয়ান, যাকে কেউ হারাতে কেউ ঠকাতে পারবে না, যাকে কাজের ভার দিয়ে নিশ্চিন্ত, হাতে টাকাকড়ি দিয়ে নির্ভয়, যাকে খবরদারি করতে হবে না, ভিড়ের মধ্যে যাকে হারিয়ে ফেলবার উৎকণ্ঠ নেই, যাকে সাজিয়ে তৃপ্তি, থাইয়ে আনন্দ—ই ছাড়া যে না বলতে জানে ন!— রাজলক্ষ্মী নিৰ্ব্বাকমুখে আমার প্রতি চাহিয়াছিল, অকস্মাং সৰ্ব্বাঙ্গে তাহার কাটা দিয়া উঠিল। বলিলাম, ও কি ও ? না কিছু না । তবে শিউরে উঠল যে ? রাজলক্ষ্মী বলিল, মুখে মুখে যে ছবি তুমি আঁকলে তার অৰ্দ্ধেক সত্যি হলেও বোধ হয় আমি ভয়ে মরে যাই । কিন্তু আমার মত এমন অকৰ্ম্ম লোক নিয়েই বা তুমি করবে কি ? রাজলক্ষ্মী হাসি চাপিয়া বলিল, করব আর কি ! ভগবানকে অভিসম্পাত করব, আর চিরকাল জলেপুড়ে মরব। এ-জন্মে আর ত কিছু চোখে দেখিনে । এর চেয়ে বরঞ্চ আমাকে মুরারিপুর আখড়ায় পাঠিয়ে দাও না কেন ? তাদেরই বা তুমি কি উপকার করবে ? তাদের ফুল তুলে দেব। ঠাকুরের প্রসাদ পেয়ে যতদিন বাচি থাকব, তারপরে তারা দেবে আমাকে সেই বকুলতলায় সমাধি । ছেলেমানুষ পদ্মা কোন সন্ধ্যায় দিয়ে যাবে প্রদীপ জেলে, কখনো বা তার ভুল হবে- সে সন্ধ্যায় আলো জলবে না। ভোরের ফুল তুলে তারি পাশ দিয়ে ফিরবে যখন কমললতা, কোনোদিন বা দেবে সে একমুঠো মল্লিকা ফুল ছড়িয়ে, কোনদিন বা দেবে কুন্দ । আর পরিচিত যদি কেউ কখনো আসে পথ ভূলে, তাকে দেখিয়ে বলবে, ঐখানে থাকে আমাদের নতুনগোসাই । ঐ যে একটু উচু—ঐ যেখানটায় শুকনে মল্লিকা-কুঁদ-করবীর সঙ্গে মিশে ゞR*