পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামুনের মেয়ে এই বলিয়াই এ প্রসঙ্গটা চাপা দিয়া কহিল, লেবেীরা উঠে গেছে মা। বাচা গেছে । কখন গেল ? কি জানি! বোধ হয় ভোরে উঠেই চলে গেছে। তাহার কৃত্রিম ঔদাসীন্য মাকে ভুলাইতে পারিল না । তিনি প্রশ্ন করিলেন, কোথায় উঠে গেল জানিস ? সন্ধ্যা তেমনি তাচ্ছিল্যভরে কহিল, অরুণদার ওই পিছনের বাগানটাতে বুঝি। তার উড়ে মালীর একটা ভাঙা পোড়ে-ঘর ছিল না ? তাতেই বোধ হয় । জগদ্ধাত্ৰী জিজ্ঞাসা করিলেন, অরুণের কাছে কে তাদের পাঠালো ? তুমি বুঝি ? সন্ধ্যা মনে মনে বিপদগ্রস্ত হইয়া কোনমতে সোজা মিথ্যাটা বঁাচাইয়া বলিল, অরুণদার কাছে আমি কেন তাদের পাঠাতে যাব মা ? আমি কাউকে কারে কাছে পাঠাইনি । এই বলিয়া সে নিরতিশয় বিশ্ৰী প্রসঙ্গটা তাড়াতাড়ি উন্টাইয়া দিয়া হাতের চিঠিটা মেলিয়া ধরিয়া কহিল, আসল কথাটাই তোমাকে এখনো বলা হয়নি মা। আমার সন্ন্যাসিনী ঠাকুরমা এবার কাশী থেকে সত্যি সত্যিই আসবেন লিখেচেন। তিনি ত কখনো মিথ্যা বলেন না মা—এবার বোধ হয় তার দয়া হয়েচে । জগদ্ধাত্র উৎসুক হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, মার চিঠি ?—কবে আসবেন লিখেচেন ? তাহার কাশীবাসিনী সন্ন্যাসী শ্বশ্রী কাশী ছাড়িয়া একটা দিনের জন্যও কোথাও যাইতে চাহিতেন না । এবার জগদ্ধাত্রী তাহাকে অনেক করিয়া লিখিয়াছেন যে, তাহার একমাত্র পৌত্রীর বিবাহে তাহাকে কেবল উপস্থিত হওয়া নয়, কস্তা দান করিতে হইবে । শাশুড়ী দান করিতে কোনমতেই সম্মত হয় নাই, কিন্তু যথাসময়ে উপস্থিত হইবেন বলিয়া জবাব দিয়াছেন । সন্ধ্যা নিজের বিবাহের কথায় লজ্জা পাইরা বলিল, তোমার চিঠির জবাব তুমি পড় না মা ! বলিয়া কাগজখানি মায়ের কাছে রাখিয়া দিয়া হঠাৎ ব্যগ্র হইয়া কহিল, ও মা, তুমি যে এখন পৰ্যন্ত ভিজে কাপড়েই রয়েচো—যাই তোমার শুকনো কাপড়খানা দৌড়ে নিয়ে আসি। এই বলিয়া সে দ্রুতবেগে প্রস্থান করিল। জগদ্ধান্ত্ৰী চিঠিখনি মাথায় ঠেকাইয়া বলিলেন, বেী বলে এতকাল পরে কি সত্যিই দয়া হলো মা ! বলিয়া উঠিয়া তিনিও ধীরে ধীরে ঠাকুরঘরের দিকে যাইবার উদ্যোগ করিতেছিলেন—অকস্মাৎ তাহার স্বামী অত্যন্ত সোরগোল করিয়া বাড়ি ঢুকিলেন। তিনি বলিতেছিলেন—দুটো দিন যাইনি, ছুটে দিন দেখিনি, অমনি হাইপোকণ্ডিয়া ডেভেলপ করেচে। স্বামীর সহিত জগদ্ধাত্রীর বড় একটা কথা হইত না, কিন্তু তাহার এই অতি-ব্যস্ততা এবং বিশেষ করিয়া বেলা বারোটার পূৰ্ব্বে আজ অকস্মাৎ প্রত্যাবর্তন দেখিয়া তিনি t