পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ দূরাঞ্চলে বখরার কারবারে অপরের সাহায্য নিয়ে থাকেন। অরুণ ক্রোধে গর্জন করিয়া বলিল, খুব সম্ভব সত্যি ! নইলে ব্রাহ্মণকুলে গোলোকের মত কসাই বা জন্মায় কি করে । অথচ, এরাই সমস্ত হিন্দুসমাজের মাথায় বসে আছে । তারপরে ? তারপর ঠাকুরমা আমার বাবাকে নিয়ে কাশী চলে গেলেন। সেই অবধি তিনি সন্ন্যাসিনী—সেই অবধি তিনি কোথাও মুখ দেখান না। সন্ধ্যা পুনশ্চ কহিল, হিরু নাকি জিজ্ঞেস করেছিল, ঠাকুরমশাই, পরকালে কি জবাব দেব ? তার মনিব বলেছিলেন, সে পাপ আমার - আমি তার জবাব দেব ? হিরু জিজ্ঞাসা করেছিল, তাদের গতিই বা কি হবে ঠাকুর ? ঠাকুরমশাই হেসে বলেছিলেন, তারা আমার স্ত্রী, তোর নয়। তোর এত দরদ কিসের ? যাদের চোখে দেখিনি, চোখে দেখব না, তাদের গতি কি হবে না-হবে সে চিত্ত। আমারই বা কি, তোরই বা কি ! আমাদের চিস্তা টাকা রোজগার। অরুণদা, তাই সেদিন আমার ঠাকুরমা তোমার কথায় কেঁদে বলেছিলেন, সন্ধ্যা, জাতে কে ছোট, কে বড়, সে কেবল ভগবান জানেন-মাহব যেন কাউকে কখনো হীন বলে ঘুণ। না করে—কিন্তু তখন ত ভাবিনি তার মানে আজ এমন করে বুঝতে হবে । কিন্তু রাত যে বেশী হয়ে যাচ্চে—আমাকে নিয়ে তোমাকে কখনো দুঃখ পেতে হবে না অরুণদা, তোমার মহত্ব, তোমার ত্যাগ আমি চিরজীবনে ভুলব না। বলিয়া সে নির্নিমেষ-চক্ষে চাহিয়া রহিল। অরুণ অনিশ্চিত-কণ্ঠে সঙ্কোচের সহিত বলিল, কিন্তু এখন ত তোমার সঙ্গে আমি যেতে পারিনে সন্ধ্যা ! সন্ধ্য চকিত হইয়া কহিল, কেন ? তুমি সঙ্গে না গেলে আমি দাড়াব কোথায় ? আমি বঁচিব কি করে ? এই আকুল প্রশ্নের জবাবটা অরুণ হঠাৎ খুজিয়া পাইল না ; তারপরে অত্যন্ত ধীরে ধীরে বলিল, আজ আমাকে ক্ষমা কর সন্ধ্যা- আমাকে একটু ভাবতে দাও। ভাবতে ! এই বলিয়া সন্ধ্যা অবাক হইয়া একদৃষ্টে অরুণের প্রতি চাহিয়া বোধ করি বা অন্ধকারে যতদূর দেখা যায় তাহার মুখখানাই দেখিবার চেষ্টা করিতে লাগিল, তারপরে একটা গভীর নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া ধীরে ধীরে উঠিয়া দাড়াইয়া বলিল, আচ্ছা ভাবো। একটু নয়, বোধ হয়, ভাববার সময় আজীবন পাবে। এতদিন আমিও ভেবেচি-দিনরাত ভেবেচি। যখন নিজের কাছে তোমাকে খুব ছোট করে দেখতে অামার বাধেনি, তখন এই কথাই ভেবেচি। আজ আবার তোমাদের ভাববার সময় এলো। আচ্ছ, চললুম, বলিয়া উঠিয়া দাড়াইতেই তাহার অঙ্গের স্বীর্ঘ অঞ্চল খলিত হইয়া নীচে পড়িয়া গেল। তুলিয়া লইয়া ধীরে ধীরে যথাস্থানে স্থাপিত করিতে ३१३