পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ভবানী আর থাকিতে পারিলেন না, জোর করিয়া গোকুলকে টানিয়া লইয়া তাহার মাথাটা বুকের উপর চাপিয়া ধরিলেন। গোকুল লজ্জায় মরিয়া গিয়া মায়ের বুকে মুখ লুকাইয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। গোকুল তাহার ছোট ভাইটিকে ষে কত ভালবাসিত, তাহা তিনি জানিতেন । বঁড়িয্যেমশাই আরও গুটিকয়েক বাছা বাছা কথা বলিয়া তাহার বিনোদকে এই সময় হইতেই যে বাটতে উপযুক্ত শিক্ষক নিযুক্ত করিয়া পড়ান উচিত ইহাই জানাইতে চাহিয়া ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ এইসময়ে পাশের ঘরের এক ঝলক আলো মাতা-পুত্রের গায়ের উপর আসিয়া পড়ায় তাহার মনে যেন একটু খটকা বাজিল। ভবানী যেমন করিয়া এই নিৰ্ব্বোধ সপত্নীপুত্রকে বুকে লইয়া তাহার মাথায় হাত বুলাইয়া দিতেছিলেন, তাছা ঠিক যেমনটি হওয়া উচিত, তেমনটি নয় বলিয়াই তাহার সন্দেহ জন্মিল। স্বতরাং এই তুলনামূলক সমালোচনা সম্প্রতি আর অধিক ঠেলিয়া লইয়া যাওয়া উচিত হইবে কি না, তাহা ঠিক ঠাহর করিতে না পারায় তাহাকে অন্য কথা পাড়িতে হইল। ভবানী এতক্ষণ প্রায় চুপ করিয়াই শুনিতেছিলেন। এখনও বেশী কথা কহিলেন না। অবশেষে রাত্রি হইতেছে বলিয়া বাড়ুৰ্য্যেমশাই বহুপ্রকার আশীৰ্ব্বচন উচ্চারণ করিয়া এবং ভবিষ্যতে বিনোদের জজিয়তি-প্রাপ্তির সম্ভাবনা বারংবার নিঃসংশয়ে জানাইয়া দিয়া লাঠিটি হাতে করিয়া গাত্ৰোখান করিলেন। ঘরের মধ্যে বৈকুণ্ঠ ঠিক যেন এই সময়টির জন্যই অপেক্ষা করিতেছিল। স্বমুখে আসিয়া কঠোরভাবে প্রশ্ন করিলেন, ই রে গোক্ৰলো, সবাই বই দেখে লিখে পাশ করে গেল, তুই লিখলি না কেন ? গোকুল ভয়ে কাটা হইয়া পূৰ্ব্ববং লুকাইয়া রহিল। অনেক ধমক-টমকের পর সে যাহা কহিল, তাহার ভাবাৰ্থ এই যে, পূৰ্ব্বারেই হেডমাস্টার মহাশয় আসিয়া চুরি করিয়া দেখা-দেখি করিয়া লিখিতে নিষেধ করিয়া দিয়া গিয়াছিলেন । বৈকুণ্ঠ কিছুক্ষণ নিঃশব্দে দাড়াইয়া কি যেন চিন্তা করিলেন, পরে বলিলেন, কাল থেকে আর তোকে ইস্কুলে যেতে হবে না, আমার সঙ্গে দোকানে যাবি । বলিয়া ঘরে ফিরিয়া গিয়া নিজের কাজে মন দিলেন । ইহা একটা মামুলি শাসনমাত্র মনে করিয়া ভবানী তখন কথা কহিলেন না। কিন্তু পরদিন সকালবেলা বৈকুণ্ঠ যখন সত্যসত্যই গোকুলকে দোকানে লইয়া যাইতে চাহিলেন, তখন তিনি আগুন হইয়া উঠিয়া ঘোরতর আপত্তি করিয়া বলিলেন, যে কথা নয়, সেই কথা ? দুধের ছেলে যাবে তোমার দোকান করতে ? সে হবে না—আমি বেঁচে থাকতে আমার গোকুলকে পড়া ছাড়তে দেব না। এমন রাগ ত দেখিনি! বলিয়া গৃহিণী ক্রোধভরে ছেলেকে টানিয়া লইয়া যাইতেছিলেন, বৈকুণ্ঠ ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন, কে রাগ করেচে ছোটবোঁ ? } evo