পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ শিবুর স্ত্রী কহিল, না । শিবু বলিল, আমি বাড়ি থাকলে মাগীকে কাটা-পেটা করে ছেড়ে দিতুম। তাহার স্ত্রী কহিল, তা হলে আজ থেকে বাড়িতেই বসে থেকে, আর কোথাও বেরিও না । বলিয়া নিজের কাজে চলিয়া গেল । সেদিন দুপুরবেল শিৰু বাড়ি ছিল না। শঙ্কু মাসিয়া বঁাশঝাড় হইতে গোটাকয়েক বঁাশ কাটিয়া লইয়া গেল। শব্দ শুনিয়া শিবুর স্ত্রী বাহিরে আলিয়া স্বচক্ষে সমস্ত দেখিল । কিন্তু বাধা দেওয়া দূরে থাকুক আজ সে কাছেও ঘোঁধিল না, নিঃশবে ঘরে ফিরিয়া গেল। দিন-দুই পরে সংবাদ শুনিয়া শিবু লাফাইতে লাগিল। স্ত্রীকে আসিয়া কহিল, তুই কি কানের মাথা খেয়েচিস ? ঘরের পাশ থেকে সে বঁাশ কেটে নিয়ে গেল, আর তুই টের পেলি না ? তাহার স্ত্রী বলিল, কেন টের পাব না, আমি চোখেই ত সব দেখিচি । শিবু কুদ্ধ হইয়া কহিল, তবু আমাকে তুই জানালিনে ? গঙ্গামণি বলিল, জানাব আবার কি ? বঁাশঝাড় কি তোমার একার } ঠাকরপোর তাতে ভাগ নেই ? শিবু বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া শুধু কহিল, তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ? সেদিন সন্ধ্যার পর পাচু সদর লইতে ফিরিয়া আসিয়া শাস্তভাবে ধপ করিয়া বসিয়া পড়িল । শিবু গরুর জন্য খড় কুচাইতেছিল, অন্ধকারে তাহার মুখের চোখের চাপ হাসি লক্ষ্য করিল না—সভয়ে জিজ্ঞাসা করিল, কি হ’লে ? পাচু গাম্ভীর্য্যের সহিত একটু হাস্ত করিয়া কহিল,পাচু থাকলে যা হয় তাই । ওয়ারেন্ট বের করে তবে আসচি। এখন কোথায় আছে জানতে পারলেই হয়। শিবুর একপ্রকার ভয়ানক জিদ চড়িয়া গিয়াছিল। সে কহিল, যত খরচ হোক ছোড়াকে ধরাই চাই । তাকে জেলে পুরে তবে আমার অন্য কাজ । তার পরে উভয়ের নানা পরামর্শ চলিতে লাগিল। কিন্তু রাত্রি এগারোটা বাজিয়া গেল, ভিতর হইতে আহারের আহবান আসে না দেখিয়া শিবু আশ্চৰ্য্য হইয়া রান্নাঘরে গিয়া দেখিল ঘর অন্ধকার । শোবার ঘরে ঢুকিয়া দেখিল, স্ত্রী মেঝের উপর মান্থর পাতিয়া শুইয়া আছে। ক্রুদ্ধ এবং আশ্চৰ্য্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, খাবার হয়ে গেছে ত আমাদের ডাকিসনি কেন ? গঙ্গামণি ধীরে-সুস্থে পাশ ফিরিয়া বলিল, কে রাধলে যে খাবার হয়ে গেছে ? ኟ¢ •