পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ

  ষোড়শী। না, আত্মরক্ষার জন্যেও না।

 ফকির। আশ্চর্য্য! (ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া) তুমি ত এখন মন্দিরে যাচ্চ ষোড়শী, আমি তা হলে চললেম।

[ষোড়শী হেঁট হইয়া নমস্কার করিল; ফকির প্রস্থান করিলেন। অন্যমনস্কের ন্যায় ষোড়শী চলিবার উপক্রম করিতেই সাগর দ্রুতবেগে আসিয়া সম্মুখে উপস্থিত হইল]

 সাগর। হাঁ মা, তোমার বাবা তারাদাস ঠাকুর নাকি ঘরে ঘরে তালা বন্ধ করে তোমাকে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েচে? তারা সবাই মিলে নাকি মতলব করেচে, তোমাকে চণ্ডীমন্দির থেকে বিদায় করে আবার নতুন ভৈরবী আনবে? সে হবে না, সাগর সর্দার বেঁচে থাকতে তা হবে না বলে দিচ্চি।

 ষোড়শী। এ-খবর তুই কোথায় শুনলি সাগর?

 সাগর। শুনেচি মা, এইমাত্র শুনতে পেয়ে তোমার কাছে জানতে ছুটে এসেচি। তুমি মেয়েমানুষ, তোমাকে একলা পেয়ে যদি জমিদারের লোক বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে থাকে সে কি তোমার অপরাধ? অপরাধ সমস্ত গ্রামের। অপরাধ এই সাগরের, যে কুটুম-বাড়িতে গিয়ে আমোদে মেতেছিল-মায়ের খবর রাখতে পারেনি। অপরাধ তার খুড়ো হরিহর সর্দারের, যে গায়ের মধ্যে উপস্থিত থেকেও এতবড় অপমানের শোধ নিতে পারেনি।

 ষোড়শী। কিন্তু এই যদি সত্যি হয়ে থাকে সাগর, তোরা দু’জন খুড়োভাইপোতে উপস্থিত থাকলেই বা কি করতিস্ বল ত? জমিদারের কত লোক-জন একবার ভেবে দেখ দিকি!

 সাগর। তাও দেখেচি মা। তাঁর ঢের লোক, ঢের পাইক-পিয়াদ। গরীব বলে আমাদের দুঃখ দিতেও তার কম করে না। কিন্তু দিক আমাদের দুঃখ, আমরা ছোটলোক বই ত না। কিন্তু তোমার হুকুম পেলে মা, ভৈরবীর গায়ে হাত দেবার একবার শোধ দিতে পারি। গলায় দড়ি বেঁধে টেনে এনে ওই হুজুরকেই রাতারাতি মায়ের স্থানে বলি দিতে পারি মা, কোন শালা আটকাতে পারবে না।

 ষোড়শী। (শিহরিয়া) বলিস কি সাগর, তোরা কি এত নিষ্ঠুর, এমন ভয়ঙ্কর হতে পারিস্? এইটুকুর জন্যে একটা মানুষ খুন করবার ইচ্ছে হয় তোদের?

 সাগর। এইটুকু? তোমার গায়ে হাত দেওয়াকে তুমি এইটুকু বল মা! তারাদাস ঠাকুরকেও আমরা মাপ করতে পারি, জনার্দ্দন রায়কেও হয়ত পারি, কিন্তু সুবিধে পেলে জমিদারকে আমরা সহজে ছাড়ব না। (ক্ষণেক থামিয়া) কিন্তু ওরা

২৬