পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ সবিতা শিহরিয়া প্রশ্ন করিলেন, শুধুই ঐশ্বর্ঘ্য দিয়ে ভুলিয়েছিলেন তাদের ? কাউকে ভালোবাসেননি ? বিমলবাবু বলিলেন, বেসেছিলুম বই কি। একজন আপনার মতোই গৃহ ছেড়ে কাছে এসেছিল, কিন্তু খেলা ভাঙলো—তাকে রাখতে পারলুম না। দোষ তাকে দিইনে, কিন্তু আজ আর আমার বুঝতে বাকী নেই, ভালোবাসার ধনকে ছোট করে রাখা যায় না —তাকে হারাতেই হয়। সেদিন রমণীবাবুকে তো এমনি হারতে দেখলুম। সবিতা প্রশ্ন করিলেন, এই কি আপনার ভয় ? বিমলবাবু বলিলেন, ভয় নয় নতুন-ৰে—এখন এই আমার ব্রত, এ থেকে বিচ্যুত মা হই এই আমার সাধনা। আপনার মেয়েকে দেখেচি, আপনার স্বামীকে দেখে এলেটি। কি কয়ে সমস্ত দিয়ে ঋণ গুধে তিনি চলে গেছেন তাও জেনেচি। শুনতে আমার ৰাকী কিছু নেই, এর পর আপনাকে পাবে। আমি কি দিয়ে ? দোর যে বন্ধ। জানি ছোট করে আপনাকে আমি কোনদিন নিতে পারবে না, আবার তার চেয়েও বেশী জানি যে, ছোট না করেও আপনাকে পাবার আমার এতটুকু পথ খোলা নেই। তাই তো বলেছিলুম নতুন-বোঁ, নিন আমাকে আপনার অকৃত্রিম বন্ধু বলে। এই বাড়িটা সেই বন্ধুর দেওয়া উপহার। এ আপনাকে ছোট করার কৌশল ময় ! লবিত নতমুখে নীরবে বসিয়া রছিলেন, কত কথাই যে তাহার মনের মধ্যে ভাসিয়া গেল তাহার নির্দেশ নাই, শেষে মুখ তুলিয়া কহিলেন, এ বন্ধুত্ব কতদিন স্থির থাকবে বিমলবাবু এ মিথ্যের আবরণ টিকবে কেন ? নর-নারীর মূল সম্বন্ধে একদিন যে আমাদের টেনে নামাবেই । সে খামাবে কে ? বিমলবাবু বলিলেন, আমি থামাবো নতুন-বে। আপনার অপেক্ষা করে থাকবে, কিন্তু মন তোলাবার আয়োজন করবো না। যদি কখনো নিজের পরিচয় পান, আমার মতো ছ’চোখ চেয়ে দৃষ্টি যদি কখনো বদলায়, কাছে আমাকে ডাকবেন— বেঁচে যদি থাকি ছুটে আসবো । ছোট করে নেবার জন্তে নয়—আসবো মাথায় তুলে নিভে । পবিতার চোখ ছল ছল করিতে লাগিল, কহিলেন, আপনার পরিচয় পেতে জার বাকী নেই বিমলবাবু, চোখের এ দৃষ্টি আর ইহজীবনে বদলাবে না। শুধু আশীৰ্ব্বাদ করুন, যে দুঃখ নিজে ডেকে এনেচি তা যেন সইতে পারি। বিমলবাবুর চোখও সজল হইয়া উঠিল, বলিলেন, দুঃখ কে দেয়, কোথা দিয়ে সে আসে আমি আজও জানিনে। তাই তোমার অপরাধের বিচার করতে আমি বলবে না, শুধু প্রার্থনা করবে, যেমন করেই এসে থাকো এ দুঃখ যেন তোমার চিরস্থায়ী না হয়। ১৯৭৮