পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/২৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় আশ্চৰ্য্য হইয়া বিমলবাবু বলিলেন, কি বুঝচে সবিতা ? কতকটা আত্মগতভাবে সবিতা বলিলেন, ঠিক স্পষ্ট করে সেটা বলা শক্ত । অঞ্জি শুধু এইটুকু আমি বেশ বুঝতে পারচি, অস্তরের শ্রদ্ধা, ভক্তি এবং সংস্কারগত ধারণা আর হৃদয়ের প্রেম একই বস্তু নয়। কিন্তু আমি শুনেচি অনেক সময় শ্রদ্ধা-ভক্তিই তো হয়ে দাড়ায় প্রেমের ভিত্তি। ই, তা হয়। করুণা মমতা বা সমবেদনাও অনেকক্ষেত্রে হয়তো প্রেমকে গড়ে তোলে ; কিন্তু আমার বিশ্বাস নারী ও পুরুষের পরম্পরের মধ্যে ভিতর ও বাহিরে স্বাভাবিক মিল না থাকলে প্রেম স্ফুৰ্ত্ত হলেও মুসার্থক হয় না। তা ছাড়া, আরও একটা কথা । অনেক সময়ে শ্রদ্ধা-ভক্তিকে কিংবা স্নেহ-মমতাকে মানুষ প্রেম বলে জুলও করে। তুমি কি বলতে চাও, স্নেহ বা মমতা হতে যে প্রেমের উদ্ভব তা সত্য কিংবা সার্থক নয় ? এমন কথা কেন বলবো ? নিশ্চয় তা সত্য, এবং সত্য হলেই সার্থক না হয়ে পারে না। আমি বলছি স্নেহ-মমতা যথার্থই যদি প্রেমে পরিণত হয়, তবেই সত্য। সাগরে গিয়ে পৌছুতে পারলে তখন সকল জলই এক, ঝর্ণার জলও যা, বৃষ্টির জল, বস্তার জলও তাই । বিমলবাবু সবিতার পানে স্থির দৃষ্টি স্থাপিত করিয়া বলিলেন, আচ্ছ, এ-সকল কথা তুমি জানলে কেমন করে ? অরক্ষণ নিরুত্তর থাকিয়া সবিতা মুক্ত আকাশে দৃষ্টি প্রসারিত করিয়া কহিল, নিজেরই বিড়ম্বিত জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে জেনেছি দয়াময় । বিমলবাবু প্রশ্নপূর্ণ নয়নে তাকাইয়া রহিলেন। সবিতা বলিলেন, বলবো তোমাকে একদিন আমার সমস্ত কথাই । * বিমলবাবু অম্বুযোগের স্বরে বলিলেন, তুমি সমস্ত কথাই অন্ত একদিন বলবো বলে সরিয়ে রেখে দাও । কবে তোমার সেই অন্য একদিন আসবে সবিতা ? একদিন বলেছিলে, তোমাকে আমার স্বামীর সমস্ত কথা শোনাবো, সে শুধু আমিই জানি, আর কেউ নয়। • * * সবিতা বলিলেন, বলতে ইচ্ছা হয়, কিন্তু বলা হয়ে উঠে না । নিজেকে সংবরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে ; কিন্তু সে সব কথা শুনে লাভই বা কি ? স্বেচ্ছায় স্বামী ত্যাগ করে যে-মেয়ে অকুলে ভেসেচে—স্বামীর প্রতি আজও তার মনোভাব কেমনতরে, জানতে বুঝি কৌতুহল হয় ? ছি—ছি—পৰিহাস করেও এমন কথা আমাকে বলা তোমার উচিত নয়, এ কি তুমি জানো না সবিতা । ' ' , " . . ~ t * * १९*