পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বাদশ সম্ভার).djvu/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ এই পরিবারে এতবড় যে প্রলয় ঘটিল, ভাঙা-গড়ায় এই গৃহে যুগান্ত বহিয়া গেল, এতবড় পরিবর্তন ঠাকুর কি জানিতেও পারেন নাই ! একেবারে নিৰ্ব্বিকার উদাসীন ? ওঁiহার অভাবের দাগ কি কোথাও পড়িল না, তাহার এতদিনের এত সেবা শুষ্ক জল-রেখার স্থায় নিশিস্থ হইয়া গেল ! বিবাহের পরেই তাহার গুরু-মন্ত্রের দীক্ষা হয়, পরিজনগণ আপত্তি করিয়া বলিষ্ঠাছিল, এত ছোট বয়সে ওটা হওয়া উচিত নয়, কারণ অবহেলায় অপরাধ স্পর্শিতে পারে। ব্ৰজ বাবু কান দেন নাই, বলিয়াছিলেন, বয়সে ছোট হলেও ওই বাড়ির গৃহিণী, অমর গোমি র ভার নেবে বলেই ওকে ঘরে আনা, নইলে প্রয়োজনও ছিল না। সে ও য়, ন শ ষ হয় নষ্ট, ইষ্ট-মন্ত্রও তিনি ভুলেন নাই, তথাপি সবই ঘুচিয়াছে ; সেই গোবিন্দর ঘরে প্রবেশের অধিকারও আর তাহার নাই, দূরে বাহিরে বসিতে হইয়াছে । ডাক্তার বিদায় করিয়া রাখাল হাসিমুখে লাফাইতে লাফাইতে আসিয়া উপস্থিত হইল, বলিল, মায়ের আশীৰ্ব্বাদের চেয়ে ওষুধ আছে নতুন-মা ? বাড়িতে প দিয়েচন দেখেই জানি আর ভয় নেই, রেণু সেরে গেছে। নতুন-মা চাহিয়া রছিলেন, ব্ৰজবাৰু স্বারের কাছে আসিয়া দাড়াইলেন, রাখাল কহিল, জয় নেই, একদম নরম্যাল! বিনোদবাবু নিজেই ভারি খুশি, বলিলেন, ও-বেলায় যদি বা একটু হয়, কাল আর জর হবে না। আর ভাবনা নেই, দিন-দুয়ের মধ্যেই সম্পূর্ণ আরোগ্য হয়ে উঠবে। নতুন-ম, এ শুধু আপনার আশীৰ্ব্বাদের ফল, নইলে এমন হয় না। আজ রাত্তিরে নিশ্চিন্ত হয়ে একটু ঘুমানো যাবে, কাকাবাবু, বঁাচা গেল । খবরটা সত্যিই অভাবিত। রেণুর পীড়া সহজ নহে, ক্রমশ: বক্রগতি লইতেছে এই ছিল আতঙ্ক । মরণ-বাচনের কঠিন পথে দীর্ঘকাল অনিশ্চিত সংগ্রাম করিয়া চলিবার জন্যই সকলে যখন প্রস্তুত হইতেছিলেন তখন আসিল এই আশার অতীত স্বসংবাদ । সবিতা গলায় আঁচল দিয়া বাক্ষণ মাটিতে মাখা ঠেকাইয়া প্রণাম করিয়া উঠিয়া বসিলেন, চোখ মুছিয়া কহিলেন, রাজু, চিরজীবী হও বাবা—হুখে থাকে। স্বাখালের আনন্দ ধরে না, মাখা হইতে গুরুভায় নামিয়া গেছে, বলিল, মা, জাগেকার দিনে রাজা-রাণীরা গলার হার খুলে পুরস্কার দিতেন। শুনিয়া সবিতা হাসিলেন, বলিলেন, হার তো তোমার গলায় মানাবে না বাবা, যদি বেঁচে থাকি বোমা এলে তার গলাতেই পরিয়ে দেবো। রাখাল বলিল, এ-জন্মে সে গলা তো খুজে পাওয়া যাবে না মা, মাঝে থেকে জামিই বঞ্চিত হলুম। জানেন তো, আমার অদৃষ্টি মুখের অল্প ধূলোয় পড়ে—তোগে আসে না । Ե8