পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ তাহার গৌরবর্ণ মুখখানি পলকের জন্য রাঙা হইয়াই এমনি সাদা হইয়া গিয়াছিল যেন কোথাও এক ফোটা রক্তের চিহ্ন পর্যন্ত নাই। স্বদ্ধ এই জানটা তাহার ছিল, যেন এ মুখের চেহারাটা কাহারও চোখে না পড়ে। তাই সে মাথার আঁচলটা আর একটু টানিয়া দিয়া দ্রুতপদে অদৃপ্ত হইয়া গেল । জ্যাঠাইমা ! কে, রমেশ ? আয় বাবা, ঘরে আয়। বলিয়া আহবান করিয়া বিশ্বেশ্বরী তাড়াতাড়ি একখানি মাদুর পাতিয়া দিলেন। ঘরে পা দিয়াই রমেশ চমকিত হইয়া উঠিল। কারণ, জ্যাঠাইমার কাছে যে স্ত্রীলোকটি বসিয়াছিল তাহাব মুখ দেখিতে না পাইলেও বুঝিল—এ রমা। তাহার ভারী একটা চিত্তজলার সহিত মনে হইল, ইহার মাসীকে মাঝখানে রাখিয়া অপমান করিতেও ক্রটি করে না, আবার নিতান্ত নির্লজ্জার মত নিভৃতে কাছে আসিয়াও বসে। এদিকে রমেশের আকস্মিক অভ্যাগমে রুমারও অবস্থাসঙ্কট কম হয় নাই। কারণ, শুধু যে সে এ গ্রামের মেয়ে তাই নয়, রমেশের সহিত তাহার সম্বন্ধট এইরূপ যে, নিতান্ত অপরিচিতার মত ঘোমটা টানিয়া দিতেও লজ্জা করে, না দিয়াও সে স্বস্তি পায় না। তা ছাড়া মাছ লইয়া এই যে সেদিন একটা কাণ্ড ঘটিয়া গেল। তাই সবদিক বাচাইয়া যতটা পারা যায় সে আড় হইয়া বসিয়াছিল। রমেশ আর সেদিকে চাহিল না। ঘরে যে আর কেহ আছে, তাহ একেবারে অগ্রাহ করিয়া দিয়া ধীরে-স্বস্থে মাছুরের উপর উপবেশন করিয়া কহিল, জ্যাঠাইমা ! জ্যাঠাইমা বলিলেন, হঠাৎ এমন দুপুরবেলা যে, রমেশ ? রমেশ কহিল, দুপুরবেলা না এলে তোমার কাছে যে একটু বসতে পাইনে । তোমার কাজ ত কম নয় ! জ্যাঠাইমা তাহার প্রতিবাদ না করিয়া শুধু একটুখানি হাসিলেন। রমেশ মৃদ্ধ হাসিয়া বলিল, বহুকাল আগে ছেলেবেলায় একবার তোমার কাছে বিদায় নিয়ে গিয়েছিলুম। আবার আজ একবার নিতে এলুম। এই হয়ত শেষ নেওয়া জ্যাঠাইম। তাহার মুখের হাসি সত্ত্বেও কণ্ঠস্বরে ভারাক্রান্ত হৃদয়ের এমনই একটা গভীর অবসাদ প্রকাশ পাইল যে, উভয়েই বিম্বিত ব্যথায় চমকিয়া উঠিলেন। বালাই ষাট ! ওকি কথা বাপ ! বলিয়। বিশ্বেশ্বরীর চোখ দুটি যেন ছল ছল করিয়া উঠিল । እግቖ