পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পল্লী-সমাজ রমেশ শুধু একটু হাসিল। বিশ্বেশ্বরী স্নেহদ্রকণ্ঠে প্রশ্ন করিলেন, শরীরটা কি এখানে ভাল থাকচে না— বাবা ? *- s রমেশ নিজের সুদীর্ঘ এবং অত্যন্ত বলশালী দেহের পানে বার-দুই দৃষ্টিপাণ্ড করিয়া বলিল, এ যে খোট্টার দেশের ডাল-রুটির দেহ জ্যাঠাইম, এ কি শীঘ্রই খারাপ হয় ? তা নয়, শরীর আমার বেশ ভালই আছে, কিন্তু এখানে আমি আর একদণ্ড টিকতে পাচ্ছিনে, সমস্ত প্রাণটা যেন আমার থেকে থেকে খাধি খেয়ে উঠচে । শরীর খারাপ হয় নাই শুনিয়া বিশ্বেশ্বর নিশ্চিন্ত হইয়া হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করিলেন, এই তোর জন্মস্থান—এখানে টিকতে পারছিলনে কেন বল্ দেখি ? রমেশ মাথা নাড়িয়া বলিল, সে আমি বলতে চাইনে। আমি জানি তুমি নিশ্চয়ই সমস্ত জান । * বিশ্বেশ্বরী ক্ষণকাল মৌম থাকিয়া একটু গম্ভীর হইয়া বলিলেন, সব না জানলেও কতক জানি বটে। কিন্তু সেই জন্যেই ত বলচি, তোর আর কোথাও গেলে চলবে ন। রমেশ । রমেশ কহিল, কেন চলবে না জ্যাঠাইমা ? কেউ ত এথানে আমাকে চায় না। জ্যাঠাইমা বলিলেন, চায় না বলেই ত তোকে আর কোথাও পালিয়ে যেতে আমি দেব না। এই যে ডাল-রুটি-খাওয়া দেহের বড়াই করছিলি রে, সে কি পালিয়ে যাবার জন্তে ? রমেশ চুপ করিয়া রহিল। আজ কেন যে তাহার সমস্ত চিত্ত জুড়িয়া গ্রামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন জলিয়া উঠিয়াছিল তাঁহার একটু বিশেষ কারণ ছিল । গ্রামের যে পথটা বরাবর স্টেশনে গিয়া পৌছয়ছিল, তাহার একটা জায়গা আট-দশ বৎসর পূৰ্ব্বে বৃষ্টির জলস্রোতে ভাঙিয়া গিয়াছিল। এই অবধি ভাঙনটা ক্রমাগত দীর্ঘতর এবং গভীরতর হইয়া উঠিয়াছে—প্রায়ই জল জমিয়া থাকে—স্থানটা উত্তীর্ণ হইতে সকলকেই একটু ঘুর্ভাবনায় পড়িতে হয়। অন্য সময়ে কোনমতে পা টিপিয়া, কাপড় তুলিয়া, অতি সন্তপণে ইহারা পার হয়, কিন্তু বর্ষাকালে আর কষ্টের অবধি থাকে না । কোন বছর বা দুটা বঁাশ ফেলিয়া দিয়া, কোন বছর বা একটা ভাঙা তালের ঢেঙা উপুড় করিয়া দিয়া, কোনমতে তাহারই সাহায্যে ইহারা, আছাড় খাইয়া, হাত-পা ভাণ্ডিয়া ওপারে গিয়া হাজির হয় । কিন্তু এত দুঃখ সত্বেও গ্রামবাসীরা জাজ পৰ্য্যস্ত তাহার সংস্কারের চেষ্টমাত্র করে নাই। মেরামত করিতে টাকা-কুড়ি ব্যয় হওয়া সম্ভব। এই টাকাটা রমেশ নিজে না দিয়া চাদ তুলিবার চেষ্টায় আট দশদিন পরিশ্রম করিয়াছে ; কিন্তু আট-দশটা পয়সা কাহারে কাছে বাহির করিতে পারে নাই। শুধু তাই নয়—আজ সকালে ঘুরিয়া আসিবার সময় পথের ধারে סיר צ