পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পল্লী-সমাজ বেণী মুখ বিকৃত করিয়া কহিল, ছোটবাবু কি ! তাই থানায় গিয়ে জানিয়ে আয় না ! বলবি, তুই বাধ পাহারা দিচ্ছিলি, ছোটবাবু চড়াও হয়ে তোকে মেরেচে। আকবর জিভ কাটিয়া বলিল, তোবা তোবা, দিনকে রাত করতি বল বড়বাৰু? বেণী কহিল, না হয় আর কিছু বলবি । আজ গিয়ে জখম দেখিয়ে আয় না-কাল ওয়ারেন্ট বার করে একেবারে হাজতে পুরব । রম, তুমি ভাল করে আর একবার বুঝিয়ে বল না। এমন স্ববিধে যে আর কখনো পাওয়া যাবে না । রম কথা কছিল না, শুধু আকবরের মুখের প্রতি একবার চাহিল। আকবর ঘাড নাড়িয়া বলিল, না, দিদিঠাক্রান, ও পারব না। বেণী ধমক দিয়া কহিল, পারধি নে কেন ? এবার আকবরও চেষ্টাইয়া কহিল, কি কও বড়বাবু, সরম নেই মোর ? পাচখানা গায়ের লোক মোরে সর্দার কয় না ? দিদিঠাক্রান, তুমি হুকুম করলে আসামী হয়ে জ্যাল খাটতে পারি, ফৈরিদি হ’ব কোন কালামুয়ে ? রমা মৃদুকণ্ঠে একবারমাত্র কহিল, পাববে না আকবর ? আকবর সবেগে মাথা নাড়ির বলিল, না দিদিঠাকৃয়ান, আর সব পারি, সদরে গিয়ে গায়ের চোঠ দেখাতে পারি না । ওঠরে গহর, এইবার ঘরকে যাই । মোরা নালিশ করতি পারব না। বলিয়া তাহার। উঠিবার উপক্রম করিল। শ্ৰেণী ক্রুদ্ধ নিরাশায় তাহদের দিকে চাহিয়া দুই চোখে অগ্নিবর্ষণ করিয়া মনে মনে অকথ্য গালিগালাজ করিতে লাগিল এবং রমার একান্ত নিরুদ্যম স্তব্ধতার কোন অর্থ বুঝিতে না পারিয়া তুবের আগুনে পুড়িতে লাগিল। সৰ্ব্বপ্রকার অনুনয়, বিনয়, ভৎসনা, ক্রোধ উপেক্ষা করিয়া আকবর আলি ছেলেদের লইয়া যখন বিদায় ইহয়া গেল, রমার বুক চিরিয়া একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বাহির হইয়, অকারণে তাহার দুই চক্ষু অশ্রশ্লাবিত হইয়া উঠিল এবং আজিকার এত বড় অপমান ও তাহার সম্পূর্ণ পরাজয়েও কেন যে কেবলি মনে হইশে লাগিল, তাহার বুকের উপব হইতে একটা অতি গুরুভার পাষাণ নামিয়া গেল, ইহার কোন হেতুই সে খুজিয়া পাইল না। বাড়ি ফিরিয়া সাররান্ত্রি তাহার ঘুম হইল না, সেই যে তারকেশ্বরে স্বমুখে বসিয়া খাওয়াইয়াছিল, নিরস্তর তাঁহাই চোখের উপর ভাসিয়া বেড়াইতে লাগিল । এবং যতই মনে হইতে লাগিল, সেই সুন্দর কুকুমার দেহের মধ্যে এত মায়া এত তেজ কি করিয়া এমন স্বচ্ছন্দে শাস্ত হইয়াছিল, ততই তাহার চোখের জলে সমস্ত মুখ ভাসিয়া যাইতে লাগিল। Ֆեy?