পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিরাজ-বে। নীলাম্বর বাহির হইয়৷ চলিয়া গেল । নিতাই ক্ষণকাল অবাক হইয়া থাকিয়া বলিল, ও ছোড়াটা নীলু নয় ? সুন্দরী মনে মনে রাগিয়া উঠিল, কিন্তু সহজভাবে বলিল, হঁ। আমার মনিব । শুনি, খেতে পায় না—এত রাত্তিরে যে ? কাজ ছিল, তাই এসেছিলেন । ও—কাজ ছিল ! বলিয়। নিতাই মুখ টিপিয়া একটু হাসিল। ভাবটা এই যে তাহার মত বয়সের লোকেল চোখে ধুলি নিক্ষেপ সহজ কর্ম নয় । সুন্দরী হাসির অর্থ স্পষ্ট বুঝিল । নিতাইয়ের বয়স পঞ্চাশের উপরে গিয়াছে, মাথার চুল বারে আন পাকিয়াছে—তাহার গোফ দাড়ি কামান, মাথায় শিখা, কপালে সকালের চন্দনের ফোট। তখনও রহিয়াছে—মৃদবী তাহার প্রতি একদুষ্টে চাহিয়া রহিল । সে চাহনির অর্থ বোঝা নিতায়ের পক্ষে সম্ভব ছিল না, তাই সে কিছু উত্তেজিত হষ্টয়াই বলিয়| উঠিল, অমন করে চেয়ে আছ যে ? দেখচি । কি দেখচ ? দেখচি তোমরাও বামুন, আর যিনি চলে গেলেন তিনিও বামুন, কিন্তু কি আকাশ-পাতাল তফাৎ ! নিতাই কথাটা বুঝিতে না পারিয়া, প্রশ্ন করিল, তফাৎ কিসে? স্বন্দরী একটুখানি হাসিয় বলিল, বুড়ো মানুষ, আর হিমে থেকে না, দাওয়ায় উঠে ব’স ! মাইরি বলচি গাঙ্গুলিমশাই, তোমার দিকে চেয়ে ভাবছিলুম, আমার মনিবের পায়ের এক ফোট। ধুলো পেলে তোমার মত কতকগুলি গাঙ্গুলি কত জন্ম উদ্ধার হতে পারে ! তাহার কথা শুনিয়া নিতাই ক্রোধে বিস্ময়ে বাকৃশুন্ত হইয়া চাহিয়া রহিল। স্বন্দরী একটা কলিকা লইয়া তামাক সাজিতে সাজিতে অত্যন্ত সহজভাবে বলিতে লাগিল, রাগ ক’রো না ঠাকুর, কথাটা সত্যি। আজ বলে নয়, বরাবরই দেখে আসচি, ও মনিবের পৈতেগাছটার দিকে চোখ পড়লে চোখ যেন ঠিকরে যায়—মনে হয়, ওঁর গলার ওপরে যেন আকাশের বিদ্যুৎ খেলা করে বেড়াচ্ছে, কিন্তু তোমাদের দেখ— দেখলেই আমার হাসি পায়। বলিয়া খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিল। প্রথম হইতেই নিতাই ঈর্ষায় জলিতেছিল, এখন ক্রোধে উন্মত্ত হইয়া উঠিল। দুই চোখ আগুনের মত করিয়া চেচাইয়া উঠিল, অত দৰ্প করিসনে স্বন্দরী, মুখ পচে যাবে। সুন্দরী কলিকাটায় ফু দিতে দিতে কাছে আসিয়া সহস্তে বলিল, কিছু হবে ন-নাও, তামাক খাও। বরং তোমার মুখই মলে পুড়বে না— আমার দুঃখী মনিবকে দেখে ঐ মুখে হেসেচ । ՀԵՊ