পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ সন্তানদের আপনার স্থা খুশি বলে ডাকবেন, কিন্তু যদি বেঁচে থাকি ঐকাস্তবাবু, আমাদের নিষ্পাপ ভালবাসার সস্তানরা মানুষ হিসাবে জগতে কারও চেয়ে ছোট হবে না—এ আমি আপনাকে নিশ্চয় বলে রাখলুম। আমার গর্ভে জন্মগ্রহণ করাটা তারা দুর্ভাগ্য বলে মনে করবে না। তাদের দিয়ে যাবার মত জিনিস তাদের বাপ-মায়ের হয়ত কিছুই থাকবে না ; কিন্তু তাদের মা তাদের এই বিশ্বাসটুকু দিয়ে যাবে যে, তারা সত্যের মধ্যে জন্মেচে, সত্যের বড় সম্বল সংসারে তাদের আর কিছু নেই। এ বস্তু থেকে ভ্ৰষ্ট হওয়া তাদের কিছুতে চলবে না। তা হলে তারা একেবারেই অকিঞ্চিৎকর হয়ে যাবে। অভয় চুপ করিল, কিন্তু সমস্ত আকাশটা যেন আমার চোখের সম্মুখে কঁাপিতে লাগিল। মুহূৰ্ত্তকালের জন্য মনে হইল, এই মেয়েটির মুখের কথাগুলি যেন রূপ ধরিয়া বাহিরে আসিয়া আমাদের উভয়কে ঘেরিয়া দাড়াইয়া আছে। এমনিই বটে ! সত্য যখন সত্যই মানুষের হৃদয় হইতে সম্মুখে উপস্থিত হয়, তখন মনে হয় যেন ইহারা সজীব , যেন ইহাদের রক্তমাংস আছে , যেন তার ভিতরে প্রাণ আছে—নাই বলিয়া অস্বীকার করিলে যেন ইহারা আঘাত করিয়া বলিবে, চুপ কর। মিথ্যা তর্ক করিয়া অন্যায়ের স্বষ্টি করিয়ো না । অভয়া সহসা একটা সোজা প্রশ্ন করিয়া বসিল ; কহিল, আপনি নিজে কি আমাদের অশ্রদ্ধার চক্ষে দেখবেন শ্ৰীকান্তবাবু? আর আমাদের বাড়িতে আসবেন না ? উত্তর দিতে আমাকে কিছুক্ষণ ইতস্তত: করিতে হইল। তার পরে বলিলাম, অন্তর্যামীর কাছে আপনারা হয়ত নিষ্পাপ—তিনি আপনাদের কল্যাণ করবেন। কিন্তু মানুষ ত মানুষের অস্তর দেখতে পায় না—তাদের ত প্রত্যেকের হৃদয় অনুভব ক’রে বিচার করা সম্ভব নয়। প্রত্যেকের জন্য আলাদা নিয়ম গড়তে গেলে ত তাদের সমাজের কাজকৰ্ম্ম শৃঙ্খলা সমস্তই ভেঙে যায়। অভয়া কাতর হইয়া কহিল, যে ধর্থে, যে সমাজের মধ্যে আমাদের তুলে নেবার মত উদারতা আছে, স্থান আছে, আপনি কি তবে সেই সমাজেই আমাকে আশ্রয় নিতে বলেন ? ইহার কি জবাব, ভাবিয়া পাইলাম না। অভয়া কহিল, আপনার লোক হয়ে আপনার জনকে আপনার সঙ্কটের কালে আশ্রয় দিতে পারবেন না, সে আশ্রয় আমাদের ভিক্ষে নিতে হবে পরের কাছে ? তাতে কি গৌরব বাড়ে ঐকাস্তবাবু? প্রত্যুত্তরে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মুখ দিয়া বাহির হইল না। অভয়া নিজেও কিছুক্ষণ মৌন থাকার পরে কহিল, যাক, আপনার জায়গা নাই ילי