পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ একটুখানি থামিয়া বলিল, কিন্তু আমার যাওয়া সেজন্য নয়। আশ্রমকেও দোষ দিতে পারিনে। আর যাই হোক, আমাকে যাও বলা হরেনদীর মুখে আসবে না। তবে যাবে কেন ? যাব নিজেরই জন্য । দেশের কাজ বটে, কিন্তু তাদের সঙ্গে আমার মতেওঁ মেলে না, কাজের ধারাতেও মেলে না। মেলে শুধু ভালবাসা দিয়ে। হরেনদীর আমি সহোদরের চেয়ে প্রিয়, তার চেয়েও আত্মীয়, কোনকালে এর ব্যতিক্রম হবে না। কমলের দুর্ভাবনা গেল। কহিল, এর চেয়ে আর বড় কি আছে রাজেন ? মন যেখানে মিলেচে, থাকৃ না সেখানে মতের অমিল। হোক না কাজের ধারা বিভিন্ন ; কি যায় আসে তাতে ? সবাই একই রকম ভাববে, একই রকম কাজ করবে, তবেই একসঙ্গে বাস করা চলবে এ কেন ? অার পরের মতকে যদি শ্রদ্ধা করতেই ন পারা গেল ত সে কিসের শিক্ষণ ? মত এবং কৰ্ম্ম দুই-ই বাইরের জিনিস রাজেন, মনটাই সত্য। অথচ এদেরই বড় করে যদি তুমি দূরে চলে যাও, তোমাদের যে ভালবাসার ব্যতিক্রম নেই বলছিলে তাকেই অস্বীকার করা হয়। সেই যে কেতাবে লেখে ছায়ার জন্ত কায়া ত্যাগ, এ ঠিক তাই হবে। রাজেন কথা কহিল না, শুধু হাসিল। হাসলে যে ? হাসলাম তখন হাসিনি বলে। আপনার নিজের বিবাহের ব্যাপারে মনের মিলনটাকেই একমাত্র সত্য স্থির করে বাহিক অনুষ্ঠানে গরমিলটাকে কিছু না বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেটা সত্য নয় বলেই আজ আপনাদের সমস্ত অসত্য হয়ে গেল । তার মানে ? রাজেন বলিল, মনের মিলনটাকে আমি তুচ্ছ করিনে, কিন্তু ওকেই অদ্বিতীয় বলে উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করাও হয়েচে আজকালকার একটা উচ্চাঙ্গের পদ্ধতি। এতে ঔদার্য্য এবং মহৰ দুই-ই প্রকাশ পায়, কিন্তু সত্য প্রকাশ পায় না। সংসারে যেন শুধু কেবল মনটাই আছে, আর তার বাইরে সব মায়া, সব ছায়াবাজি । এটা ভুল। একটুখানি থামিয়া কহিল, আপনি বিভিন্ন মতবাদকে শ্রদ্ধা করতে পারাটাকেই মস্ত বড় শিক্ষা বলছিলেন, কিন্তু সৰ্ব্বপ্রকার মতকেই শ্রদ্ধা করতে পারে কে জানেন ? যার নিজের কোন মতের বালাই নেই। শিক্ষার দ্বারা বিরুদ্ধ মতকে নিঃশব্দে উপেক্ষা করা যায়, কিন্তু শ্রদ্ধ করা যায় না। 98९