পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন করলে আর সমস্তই আজ পরিহাস বলে মনে লাগে । বলিতে বলিতে তাহার চোখের প্রখর দৃষ্টি ছায়াচ্ছন্ন হইয়া আসিল এবং সমস্ত মুখের পরে এমনই একটা স্নিগ্ধ সজলত ভাগি আসিল যে, কমলের সে হিরেন্স কোনদিন দেখে নাই। আর তাহার সংশয়মাত্র রহিল না যে, অমুদ্দিষ্ট আর কাহাকে উদ্দেশ করিয়া কমল এইসকল বলিতেছে। সে শুধু উপলক্ষ এবং এইজন্যই আগাগোড়া সমস্তই তাহার হেঁয়ালির মত ঠেকিতেছে। কমল বলিতে লাগিল, আপনি এইমাত্র আমার দুৰ্ম্মদ নির্ভীকতার প্রশংসা করছিলেন—ভাল কথা, শুনেচেন, শিবনাথ আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন ? হরেন্দ্র লজ্জায় মাথা হেঁট করিয়া জবাব দিল, হা । কমল কহিল, আমাদের মনে মনে একটা সৰ্ত্ত ছিল, ছাড়বার দিন যদি কখনো আসে যেন আমরা সহজেই ছেড়ে যেতে পারি। না না, চুক্তি-পত্রে লেখাপড়া করে নয়, এমনিই । 蠟 হরেন্দ্র কহিল, ক্ৰট । কমল কহিল, সে ত আপনার বন্ধু অক্ষয়বাবু। শিবনাথ গুণী মামুং, তার বিরুদ্ধে আমার কিন্তু নিজের খুব বেশি নালিশ নেই। নালিশ করেই বা লাভ কি ? হৃদয়ের আদালতে একতরফা বিচারই একমাত্র বিচার, তার ত আর আপীল কোর্ট মেলে না । হরেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, তার মানে ভালবাসার অতিরিক্ত আর কোন বঁাধনই . আপনি স্বীকার করেন না ? কমল কহিল, একে ত আমাদের ব্যাপারে আর কোন বাধন ছিল না, আর থাকলেই বা তাকে স্বীকার করিয়ে ফল কি ? দেহের যে অঙ্গ পক্ষাঘাতে অবশ হয়ে. যায় তার বাইরের বাধনই মস্ত বোঝা । তাকে দিয়ে কাজ করাতে গেলেই সবচেয়ে বেশি বাজে। এই বলিয়া একমুহূৰ্ত্ত নীরব থাকিয়া পুনরায় কহিতে লাগিল, আপনি ভাবচেন সত্যিকার বিবাহ হয়নি বলেই এমন কথা মুখে আনতে পারচি, হলে পারতুম না। হলেও পারতুম, শুধু এত সহজে এ সমস্তার সমাধান পেতুম না। বিবশ অঙ্গটা হয়ত এ-দেহে সংলগ্ন হয়ে থাকত এবং অধিকাংশ রমণীর যেমন ঘটে, আমরণ তার দুঃখের বোঝা বয়েই এ-জীবন কীটত। আমি বেঁচে গেছি হরেনবাবু, দৈবাৎ নিষ্কৃতির দোর খোলা ছিল বলে আমি মুক্তি পেয়েচি । হরেন্দ্র কহিল, আপনি হয়ত মুক্তি পেয়েচেন, কিন্তু এমনিধারা মুক্তির দ্বার যদি সবাই খোলা রাখতে চাইত, জগতে সমাজ-ব্যবস্থার বোনেদ পর্য্যন্ত উপড়ে ফেলতে ኃ¢ማ