পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ করেচে, কিন্তু এখন সে সংশয় আমার ঘুচেচে। দৈন্ত এবং অভাব ইচ্ছাতেই আমুক বা ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আস্বক, ও নিয়ে দৰ্প করবার কিছু নেই। ওর মাঝে আছে শূন্তত, ওর মাঝে আছে দুৰ্ব্বলতা, ওর মাঝে আছে পাপ—অভাব যে মানুষকে কৃত হীন, কত ছোট করে আনে, সে আমি দেখে এসেচি মহামারীর মধ্যে—মুচীদের পাড়ায় গিয়ে । আর একজন দেখেচেন তিনি আপনার বন্ধু রাজেন । কিন্তু তার কাছ থেকে ত কিছু পাওয়া যাবে না, আসামের গভীর অরণ্যের মত কি যে সেখানে লুকিয়ে আছে কেউ জানে না। আমি প্রায় ভাবি, আপনার তাকেই দিলেন বিদায় করে। সেই যে কথায় আছে—মণি ফেলে অঞ্চলে কাচখণ্ড গেরো দেওয়া—আপনারা ঠিক কি তাই করলেন । ভেতর থেকে কোথাও নিষেধ পেলেন না ? আশ্চৰ্য্য! হরেন্দ্র উত্তর দিল না, চুপ করিয়া রহিল। আয়োজন সামান্ত, তথাপি কি যত্ন করিয়াই না কমল অতিথিকে খাওয়াইল । খাইতে বসিয়া হরেন্দ্রর বার বার করিয়া নীলিমাকে স্মরণ হইল ; নারীত্বের শাস্ত মাধুর্ঘ্য ও গুচিস্তার আদর্শে ইহার চেয়ে বড় সে কাহাকেও ভাবিত না। মনে মনে বলিল, শিক্ষা, সংস্কার, রুচি ও প্রবৃত্তিতে প্রভেদ ইহাদের মধ্যে যত বেশিই থাকৃ, সেবা ও মমতায় উহার একেবারে এক । ওটা বাহিরের বস্তু বলিয়াই বৈষম্যেরও অবধি নাই, তর্কও শেষ হয় না, কিন্তু নারীর যেটি নিজস্ব আপন, সৰ্ব্বপ্রকার মতামতের একান্ত বহির্ভূত, সেই গুঢ় অস্তর্দেশের রূপটি দেখিলে একেবারে চোখ জুড়াইয়া যায়। নানা কারণে আজ হরেন্দ্রর ক্ষুধা ছিল না, শুধু একজনকে প্রসন্ন করিতেই সে সাধ্যের অতিরিক্ত ভোজন করিল। কি একটা তরকারী ভাল লাগিয়াছে বলিয়া পাত্র উজাড় করিয়া ভক্ষণ করিল, কহিল, অনেকদিন অসময়ে হাজির হয়ে বৌদিদিকেও ঠিক এমনি করেই জব্দ করেচি কমল। কাকে, নীলিমাকে ? हैं । তিনি জব্দ হতেন ? নিশ্চয়। কিন্তু স্বীকার করতেন না। কমল হাসিয়া কহিল, কেবল আপনি নয়, সমস্ত পুরুষমানুষেরই এমনি মোটা বুদ্ধি। ইরেক্স তর্ক করিয়া বলিল, আমি চোখে দেখেচি ষে। কমল কহিল, সেও জানি। আর ঐ চোখে-দেখার অহঙ্কারেই আপনার গেলেন। হরেজ কহিল, অহঙ্কার আপনাদেরও কম নয়। সে-বেলা বৌদির খাওয়া হ’তো ন—উপবাস করে কাটাতেন, তবু হার মানতে চাইতেন না। ’ ১৭২