পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন র্তার বলেন, পরার্থে আপনাকে উৎসর্গ করে দিতে। সংসারের দুঃখেরও অভাব নেই, আত্ম-নিবেদনের দৃষ্টাস্তেরও অসদ্ভাব নেই। এসব আমিও জানি, কিন্তু এর মাংে নারীর নিরবরুদ্ধ কল্যাণময় সত্যকার আনন্দ আছে কি না আজও আমি নিঃসংশয়ে জানিনে নীলিমা । হরেক্স জিজ্ঞাসা করিল, এ সন্দেহ কি আপনার বরাবর ছিল ? আপ্তবাবু মনে মনে যেন কুষ্ঠিত হইলেন, একটু থামিয়া বলিলেন, ঠিক স্মরণ করতে পারিনে হরেন। তখন দিন দুই-তিন হ’লে মনোরম চলে গেছে, মন ভারাতুর, দেহ বিবশ, এই চৌকিটাতেই চুপ করে পড়ে আছি, হঠাৎ দেখি কমল এসে উপস্থিত। আদ্বর করে ডেকে কাছে বসালুম। আমার ব্যথার জায়গাটা সে সাবধানে পাশ কাটিয়ে যেতেই চাইলে, কিন্তু পারলে না। কথায় কথায় এই ধরণের কি একটা প্রসঙ্গ উঠে পড়ল, তখন আর তার হস রইলো না। তোমরা জানোই তো তাকে, প্রাচীন যা-কিছু তার পরেই তার প্রবল বিতৃষ্ণ । নাড়া দিয়ে ভেঙে ফেলাই যেন তার passion । মন সায় দিতে চায় না, চিরদিনের সংস্কার ভয়ে কাঠ হয়ে ওঠে, তবু কথা খুজে মেলে না, পরাভব মানতে হয়। মনে আছে সেদিনও তার কাছে মেয়েদের আত্মোৎসর্গের উল্লেখ করেছিলুম, কিন্তু কমল স্বীকার করলে না, বললে, মেয়েদের কথা আপনার চেয়ে আমি বেশি জানি। ও-প্রবৃত্তি তো তাদের পূর্ণতা থেকে আসে না, আসে শুধু শূন্তত থেকে—ওঠে বুক খালি করে দিয়ে। ও-তে স্বভাব না—অভাব । অভাবের আত্মোৎসর্গে আমি কাণ-কড়ি বিশ্বাস করিনে আণ্ডবাবু। কি যে জবাব দেবো ভেবে পেলাম না, তবু বললাম, কমল, হিন্দু-সভ্যতার মৰ্ম্মবস্তুটির সঙ্গে তোমার পরিচয় থাকলে আজ হয়ত বুঝিয়ে দিতে পারতুম যে, ত্যাগ ও বিসর্জনের দীক্ষায় সিদ্ধিলাভ করাই আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতা এবং এই পথ ধরেই আমাদের কত বিধবা মেয়েই একদিন জীবনের সৰ্ব্বোত্তম সার্থকতা উপলব্ধি করে গেছেন । কমল হেসে বললে, করতে দেখেচেন ? একটা নাম করুন তো ? সে এ-রকম প্রশ্ন করবে ভাবিনি, বরঞ্চ ভেবেছিলাম কথাটা হয়ত মেনে নেবে। কেমনধারা যেন ঘুলিয়ে গেল— নীলিমা বলিল, বেশ । আপনি আমার নামটা করে দিলেন না কেন ? মনে পড়েনি বুঝি ? . কি কঠোর পরিহাস । হরেন্দ্র ও অজিত মাথা হেঁট করিল এবং বেলা আর একদিৰে মুখ ফিরাইয়া রহিল। ২১৯ SH-Rూ