পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ অজিতের বাবা ছিলেন গুরুগোবিন্দের পরম ভক্ত। তাই শিখদের মহাতীর্থ অমৃতসরে তিনি খালসা কলেজের কাছাকাছি মাঠের মধ্যে একটা বাঙ্গলো-বাড়ি তৈরি করাইয়াছিলেন। সময় ও সুবিধা পাইলেই আসিয়া বাস করিয়া যাইতেন। র্তার মৃত্যুর পরে বাড়িটা ভাড়ায় থাটিতেছিল, সম্প্রতি থালি হইয়াছে ; এই বাড়িতেই দু’জনে কিছুকাল বাস করিবে । মাল-পত্র যাইবে লরিতে এবং পরে শেষরাত্রে মোটরে করিয়া উভয়ে রওনা হইবে। সেই প্রথমদিনের স্মৃতি—এটা কমলের অভিলাষ । অজিত কহিল, হরেন্দ্রর ওখানে তুমি কি এক যাবে নাকি ? যাই না? আশ্রমের দোর তো খোলাই রইল, যবে খুশি দেখা করে যেতে পারবে। কিন্তু আমার তো সে আশা নেই, শেষ দেখা দেখে আসি গে, কি বল ? অজিত চুপ করিয়া রহিল। স্পষ্ট দেখিতে পাইল, সেথায় নানা ছলে বহু তীক্ষ ও তিক্ত ইঙ্গিতে ব্যক্ত ও অব্যক্ত ইসারায় আজ শুধু একটিমাত্র দিকেই ছুটিতে থাকিবে, ইহারই সন্মুখে এই একাকিনী রমণীকে পরিত্যাগ করার মত কাপুরুষতা আর কিছু হইতেই পারে না । কিন্তু সঙ্গী হইবার সাহস নাই, নিষেধ করাও তেমনি কঠিন। . নূতন গাড়ী কেনা হইয়া আসিয়াছে, সন্ধ্যার কিছু পরে সোফার কমলকে লইয়া চলিয়া গেল । হরেন্দ্রর বাসায় দ্বিতলের সেই হল-ঘরটায় নূতন দামী কাপেট বিছাইয়া অতিথিদের স্থান করা হইয়াছে। আলো জলিতেছে অনেকগুলো, কোলাহলও কম হইতেছে না। মাঝখানে আপ্তবাবু ও র্তাহাকে ঘিরিয়া জন-কয়েক ভদ্রলোক। বেলা আসিয়াছেন এবং আরও একটি মহিলা আসিয়াছেন তিনি ম্যাজিষ্ট্রেটের পত্নী মালিনী । কে একটি ভদ্রলোক এদিকে পিছন ফিরিয়া তাহীদের সঙ্গে গল্প করিতেছেন। নীলিমা নাই, খুব সম্ভব অন্যত্র কাজে নিযুক্ত। . হরেন্দ্র ঘরে ঢুকিল এবং ঢুকিয়াই চোখে পড়িল এদিকের দরজার পাশে দাড়াইয়া কমল। সবিস্ময়ে কলস্বরে সম্বৰ্দ্ধনা করিল, কমল যে ? কখন এলে ? অজিত কই ? সকুলের দৃষ্টি একাগ্র হইয়া ঝুকিয়া পড়িল। কমল দেখিল, যে ব্যক্তি মহিলাদের সহিত আলাপ করিতেছিলেন তিনি আর কেহ নহেন স্বয়ং অক্ষয়। কিঞ্চিৎ,ণীর্ণ। ইনফ্লুয়েঞ্জা এড়াইয়াছেন, কিন্তু দেশের ম্যালেরিয়াকে পাশ কাটাইতে পারেন নাই। ভালই যে তিনি ফিরিয়াছেন, নইলে শেষ-দেখার হয়ত আর সুযোগ ঘটিত না। দুঃখ থাকিয়া যাইত। 劇 劇 ২৬৪