পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

C e কমল বলিল, অজিতবাবু আসেননি, শরীরটা ভাল নয়। আমি এসেচি অনেকক্ষণ। অনেকক্ষণ ? ছিলে কোথায় ? * নীচে। ছেলেদের ঘরগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। দেখছিলাম, ধৰ্ম্মকে তো ফাকি দিলেন, কৰ্ম্মকেও ঐ সঙ্গে ফাকি দিলেন কি না ? এই বলিয়া সে হাসিয়া ঘরে আসিয়া বসিল । সে যেন বর্ষার বস্তু-লতা। পরের প্রয়োজনে নয়, আপন প্রয়োজনেই আত্মরক্ষার সকল সঞ্চয় লইয়া মাটি ফুড়িয়া উৰ্দ্ধে মাথা তুলিয়াছে। পারিপার্থিক বিরুদ্ধতায় ভয়ও নাই, ভাবনাও নাই, যেন কাটার বেড়া দিয়া বাচানোর প্রশ্নই বাহুল্য। ঘরে আসিয়া বসিল, কতটুকুই বা । তথাপি মনে হইল যেন রূপে, রসে, গৌরবে স্বকীয় মহিমার একটি স্বচ্ছন্দ আলো সে সকল জিনিসেই ছড়াইয়া দিল । ঠিক এই ভাবটিই প্রকাশিত হইল হরেন্দ্রর কথায়। আর দুটি নারীর সম্মুখে শালীনতায় হয়ত কিছু ক্রটি ঘটিল, কিন্তু আবেগভরে বলিয়া ফেলিল, এতক্ষণে মিলন-সভাটি আমাদের সম্পূর্ণ হ’লো। কমল ছাড়া ঠিক এমনি কথাটি আর কেউ বলতে পারতো না । অক্ষয় কহিল, কেন ? দৰ্শন-শাস্ত্রের কোন স্বল্প তত্ত্বটি এতে পরিস্ফুট হলো শুনি ? কমল সহাস্তে হরেন্দ্রকে কহিল, এবার বলুন ? দিন এর জবাব ? হরেঞ্জ এবং অনেকেই মুখ ফিরাইয়া বোধ হয় হাসি গোপন করিল। • অক্ষয় নীরস-কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল, কি কমল, আমাকে চিনতে পার তো ? আশুবাবু মনে মনে বিরক্ত হইয়া বলিলেন, তুমি পারলেই হ’লো। চিনতে ভূমি পারচ তো অক্ষয় ? কমল কহিল, প্রশ্নটি অন্যায় আশুবাবু। মানুষ-চেনা ওঁর নিজস্ব বৃত্তি। ওখানে সন্দেহ করা ওঁর পেশায় ঘা দেওয়া । কথাটি এমন করিয়া বলিল যে, এবার আর কেহ হাসি চাপিতে পারিল না। কিন্তু পাছে এই দুঃশাসন লোকটি প্রত্যুত্তরে কুৎসিত কিছু বলিয়া বসে, এই ভয়ে সবাই শঙ্কিত হইয়া উঠিল। আজিকার দিনে অক্ষয়কে আহবান করার ইচ্ছা হরেন্দ্রর ছিল না, কিন্তু সে বহুদিন পরে ফিরিয়াছে, না বলিলে অতিশয় বিশ্ৰী দেখাইবে ভাবিয়াই নিমন্ত্ৰণ করিয়াছে। সভয়ে সবিনয়ে কহিল, আমাদের এই শহর থেকে হয়ত বা এদেশ থেকেই আগুবাবু চলে যাচ্চেন ; ওঁর সঙ্গে পরিচিত হওয়া যে-কোন মানুষেরই ভাগ্যের কথা । সেই সৌভাগ্য আমরা পেয়েচি। আজ ওঁর দেহ অমুস্থ, মন অবসন্ন, জাজ যেন আমরা সহজ সৌজন্যের মধ্যে ওঁকে বিদায় দিতে পারি। .২৬৫