পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ আমার মেজদেওর টাকা চল্লিশের মত কোথাও চাকরী করতেন, কিন্তু একটা পয়সা কখনো সংসারে দিতেম না । অথচ তার অফিসের সময়ের ভাত, অফিস থেকে এলে পা-ধোবার গাডু-গামছা, জল-খাবার, পান তামাক ইত্যাদি যোগাবার, জন্ত বাড়িগুদ্ধ সবাই যেন ত্রস্ত হয়ে থাকত। দেখতুম, আমার স্বামী, আমার মেজদেওর হয়ত কোনদিন একসঙ্গেই বিকেলবেলায় বাড়ি ফিরে এলেন, সবাই তার জন্তেই ব্যতিব্যস্ত, এমন কি চকেরটা পৰ্য্যন্ত র্ত্যকে প্রসন্ন করবার জন্যে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্চে। তার একতিল দেরি কিংবা অসুবিধা হলে যেন পৃথিবী রসাতলে যাবে। অথচ আমার স্বামীর দিকে কেউ চেয়েও দেখত না । তিনি আধঘণ্টা ধরে হয়ত এক ঘটি জলের জন্তে দাড়িয়ে আছেন, সেদিকে গ্রাহই নেই। অথচ এদের খাওয়াপরা সুখ-সুবিধের জন্তেই তিনি দিবারাত্রি থেটে মরচেন। ছ্যাকড়া গাড়ির ঘোড়াও মাঝে মাঝে বিদ্রোহ করে, কিন্তু তার যেন কিছুতেই শ্রান্তি নেই, কোন দুঃখই যেন তাকে পীড়া দিতে পারে না । এমন শান্ত, এত ধীর, এতবড় পরিশ্রমী এর আগে কখনও আমি দেখিনি। আর চোখে দেখেচি বলেই লিখতে পরিচি, নইলে শোনা কথা হলে বিশ্বাস করতেই পারতুম না, সংসারে এমন ভালোমানুষও থাকতে পারে। মুখে হাসিটি লেগেই আছে। সবতাতেই বলতেন, থাক্ থাকু আমার এতেই হবে । স্বামীর প্রতি আমার মায়াই ত ছিল না, বরঞ্চ বিতৃষ্ণার ভাবই ছিল। তবু এমন একটা নিরীহ লোকের উপর বাড়িগুদ্ধ সকলের এতবড় অন্যায় অবহেলায় আমার গ যেন জলে যেতে লাগল । বাড়িতে গরুর দুধ বড় কম হত না । কিন্তু তার পাতে কোনদিন বা একটু পড়ত, কোনদিন পড়ত না । হঠাৎ একদিন সইতে না পেরে বলে ফেলেছিলুম আর কি। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হ’ল, ছি, ছি, কি নিল্পজই আমাকে তা হলে এর মনে করত ! তা ছাড়া এরা সব আপনার লোক হয়েও যদি দয়া-মায়া না করে, আমারই বা এত মাথা-ব্যথা কেন ? আমি কোথাকার কে ? পর বই ত না । দিন পাঁচ-ছয় পরে একদিন সকালবেলা রান্নাঘরে বসে মেজঠাকুরপোর জন্তে চা তৈরি করচি, স্বামীর কণ্ঠস্বর আমার কানে গেল। তার সকালেই কোথায় বার হবার দরকার ছিল, ফিরতে দেরি হবে, মাকে ডেকে বললেন, কিছু খেয়ে গেলে বড় ভাল হ’ত মা, খাবার-টাবার কিছু আছে ? মা বললেন, অবাক করলে ঘমস্যাম। এত সকালে খাবার পাব কোথায় ? স্বামী বললেন, তবে থাক, ফিরে এসেই খাব। বলে চলে গেলেন। ఇప్సి