পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী তিমি আমার মুখের পানে কট্‌মটু করে চেয়ে বললেন, তোমার সঙ্গে তন্ধ করতে পারিনে বাছা, আমার কাজ আছে। • এতক্ষণ রাগ সামলেছিলুম, আর পারলুম না। বলে ফেললুম, কাজ সকলেরি আছে মা ! তিনি তিরিশ টাকার কেরাণীগিরি করেন না বলে, কুলি-মানুষ বলে তোমরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে পারে। কিন্তু আমি ত পারিনে। আমি ওই দিয়ে র্তাকে খেতে দেব না। রাধুনি রাধতে না পারে, আমি যাচ্চি। শাশুড়ী খানিকক্ষণ অবাক হয়ে আমার পানে চেয়ে থেকে বললেন, তুমি ত কাল এলে বেীমা, এতদিন তার কি করে খাওয়া হ’ত শুনি ? বললুম, সে গোজে আমার দরকার নেই। কিন্তু কাল এলেও আমি কচি খুকী নই মা। এখন থেকে সে-সব হতে দিতে পারব না। রান্নাঘরে ঢুকে রাঁধুনীকে বললুম, বড়বাবুর জন্যে নিরামিষ ডাল, ডালনা, অম্বল হবে। তুমি না পার, একটা উমুন ছেড়ে দাও, আমি এসে রাধচি, বলে আর কোন তর্কাতর্কির অপেক্ষা না করে স্নান করতে চলে গেলুম। স্বামীর বিছানা আমি রোজ নিজের হাতেই করতুম। এই ধপধপে সাদা বিছানাটির উপর ভেতরে ভেতরে যে একটা লোভ জন্মাচ্ছিল, হঠাৎ এতদিনের পর আজ বিছানা করবার সময় সে-কথা জানতে পেরে নিজের কাছেই যেন লজ্জায় মরে গেলুম। ঘড়ীতে বারোটা বাজতে তিনি গুতে এলেন। কেন যে এতরাত পৰ্য্যন্ত জেগে বসে বই পড়ছিলুম, তার পায়ের শব্দ সে-খবর আজ এমনি স্পষ্ট করে আমার কানে কানে বলে দিলে যে, লজ্জায় মুখ ভুলে চাইতেও পারলুম না । স্বামী বললেন, এখনো শোওনি যে ? আমি বই থেকে মুখ তুলে ঘড়ীর পানে তাকিয়ে যেন চমকে উঠলুম—তাই ত, বারোটা বেজে গেছে ? কিন্তু যিনি সব দেখতে পান, তিনি দেখেছিলেন আমি পাচ মিনিট অস্তর ঘড়ী দেখেচি । স্বামী শয্যায় বসে একটু হেসে বললেন, আজ আবার কি হাঙ্গামা বাধিয়েছিলে ? বললুম, কে বললে ? তিনি বললেন, সেদিন তোমাকে ত বলেচি, আমি হাত গুণতে জানি। o WQe )