পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ একাদশী খাতাটা তুলিয়া লইয়া প্রায় পোনর মিনিট ধরিয়া আগাগোড়া তন্ন তন্ন করিয়া নিরীক্ষণ করিয়া শেষে একটা নিশ্বাস ফেলিয়া খাতাটা ফিরাইয়া দিয়া বলিল, আমি বুড়োমানুষ, আমার কাছে আবার চাঁদা কেন ? অপূৰ্ব্ব কোনমতে রাগ সামলাইয়া কহিল, বুড়োমানুষ টাকা দেবে না ত কি ছোটছেলেতে টাকা দেবে ? তারা পাবে কোথায় শুনি ? বুড়ে সে-কথার উত্তর না দিয়া কহিল, ইস্কুল ত হয়েচে কুড়ি-পঁচিশ বছর ; কৈ, এতদিন ত কেউ লাইব্রেরীর কথা তোলেনি বাবু? তা যাক, এ ত আর মন্দ কাজ নয়, আমাদের ছেলেপুলে বই পড়ুক আর না পড়ুক, আমার গায়ের ছেলেরাই পড়বে ত! কি বল ঘোষালমশাই ? ঘোষাল ঘাড় নাড়িয়া কি যে বলিল, বোঝা গেল না । একাদশী কহিল, তা বেশ, চাদ দেব আমি, একদিন এসে নিয়ে যাবেন চার আনা পয়সা । কি বল ঘোষাল, এর কমে আর ভাল দেখায় না। অতদূর থেকে ছেলেরা এসে ধরেচে, যা হোক একটু নাম-ডাক আছে বলেই ত? আরও ত লোক আছে, তাদের কাছে ত চাইতে যায় না, কি বল হে ? ক্রোধে অপূৰ্ব্বর মুখ দিয়া কথা বাহির হইল না। অনাথ কহিল, এই চার আনার জন্তে আমরা এতদুরে এসেচি ? তাও আবার আর একদিন এসে নিয়ে যেতে হবে ? একাদশী মুখে একটা শব্দ করিয়া মাথা নাড়িয়া নাড়িয়া বলিতে লাগিল, দেখলেন ত অবস্থা, ছ’টা পয়স হকের সুদ আদায় করতে ব্যাটাদের কাছে কি ছ্যাচড়াপনাই না করতে হয় ? তা এ পাট-টা বিক্রী না হয়ে গেলে আর চাদী দেবার সুবিধে— অপূৰ্ব্বর রাগে ঠোঁট কঁাপিতে লাগিল ; বলিল, সুবিধে হবে এখানেও ধোপানাপিত বন্ধ হলে । ব্যাট পিশাচ সৰ্ব্বাঙ্গে ছিটে-ফোটা কেটে জাত হারিয়ে বোষ্টম হয়েচেন, আচ্ছা ! বিপিন উঠিয় দাড়াইয়া একটি আঙ্গুল তুলিয়া শাসাইয়া কহিল, বারুইপুরের রাখালদাসবাবু আমাদের কুটুম্ব, মনে থাকে যেন বৈরাগী ! বুড় বৈরাগী এই অভাবনীয় কাণ্ডে হতবুদ্ধি হইয়া চাহিয়া রহিল। বিদেশী ছেলেদের অকস্মাৎ এত ক্রোধের হেতু সে কিছুতেই বুঝিতে পারিল না। অপূৰ্ব্ব বলিল, গরীবের রক্ত শুষে সুদ থাওয়া তোমার বার করব তবে ছাড়ব । নফর তখনও বসিয়াছিল ; তাহার কাছায় বাধা পয়সা দুটো আদায় করার রাগে মনে মনে ফুলিতেছিল ; সে কহিল, যা কইলেন কৰ্ত্ত, তা ঠিক । বৈরাগী ত নয়, পিচেশ ! চোখে দেখলেন ত কি করে মোর পয়সা দুটো আদায় নিলে । Uరిన్చ