পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একাদশী বৈরাগী গৌরী রেকবীটি কুড়াইয়া লইয়া, কাহারও প্রতি দৃষ্টিপাত না করিয়া নিঃশব্দে দরজার আড়ালে গিয়া দাড়াইল । তথা হইতে কহিল, দাদা, এরা যে কিসের চাদ নিতে এসেছিলেন, তুমি দিয়েচ ? একাদশী এতক্ষণ পৰ্য্যন্ত বিহালের ন্যায় বসিয়াছিল, তগিনীর আহবানে চকিত হইয়া বলিল, ন, এই যে দিই দিদি ! অপূৰ্বর প্রতি চাহিয়া হাতজোড় করিয়া কহিল, বাবুমশাই, আমি গরীব-মানুষ। চার আনাই আমার.পক্ষে ঢের, দয়া করে নিন । বিপিন পুনরায় কি একটা কড়া জবাব দিতে উদ্যত হইয়াছিল, অপূর্ব ইঙ্গিতে তাহাকে নিষেধ করিল ; কিন্তু এত কাণ্ডের পর সেই চার আনার প্রস্তাবে তাহার নিজেরও অত্যন্ত ঘৃণাবোধ হইল। আত্মসংবরণ করিয়া কহিল, থাক্ বৈরাগী, তোমায় কিছু দিতে হবে না। একাদশী বুঝিল, ইহা রাগের কথা ; একটা নিশ্বাস ফেলিয়া কহিল, কলিকাল । বাগে পেলে কেউ কি কারও ঘাড় ভাঙতে ছাড়ে ! দাও ঘোষালমশাই, পাচ গণ্ড৷ পয়সাই খাতায় খরচ লেখ । কি আর করব বল। বলিয়া বৈরাগী পুনরায় একটা দীর্ঘশ্বাস মোচন করিল। তাগর মুখ দেখিয়া অপূৰ্ব্বর এবার হাসি পাইল। এই কুসীদজীবী বৃদ্ধের পক্ষে চার আনার এবং পাচ আনার মধ্যে কতবড় যে প্রকাও প্রভেদ, তাহ সে মনে মনে বুবিল ; মৃদু হাসিয়া কহিল, থাক্ বৈরাগী, তোমায় দিতে হবে না। আমরা চার-পাচ আন পয়সা চাদ নিইনে। আমরা চললুম। কি জানি কেন, অপূৰ্ব্ব একান্ত আশা করিয়াছিল, এই পাচ আনার বিরুদ্ধে দ্বারের অন্তরাল হইতে অন্ততঃ একটা প্রতিবাদ আসিবে। তাহার অঞ্চলের প্রান্তটুকু তখনও দেখা যাইতেছিল, কিন্তু সে কোন কথা কছিল না। যাইবার পূৰ্ব্বে অপূৰ্ব্ব যথার্থ-ই ক্ষোভের সহিত মনে মনে কহিল, ইহারা বাস্তবিকই অত্যন্ত ক্ষুদ্র। দান করা সম্বন্ধে পাচ আনা পয়সার অধিক ইহাদের ধারণা নাই। পয়সাই ইহাদের প্রাণ, পয়সাই ইহাদের অস্থি-মাংস, পয়সার জন্য ইহার করিতে পারে না এমন কাজ সংসারে নাই । অপূৰ্ব্ব সদলবলে উঠিয়া দাড়াইতেই একটি বছর-দশেকের ছেলের প্রতি অনাথের দৃষ্টি পড়িল। ছেলেটির গলায় উত্তরীয়, বোধ করি পিতৃবিয়োগ কিংবা এমনি কিছু একটা ঘটিয়া থাকিবে। তাহার বিধবা জননী বারনায় খুটির আড়ালে বলিয়াছিল। অনাথ আশ্চৰ্য্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, পুটে, তুই যে এখানে ? «Ļo পুটে আঙ্গুল দেখাইয়া কহিল, আমার মা বসে আছেন। মা বললেন, আমাদের অনেক টাকা ওঁর কাছে জমা আছে। বলিয়া সে একাদশীকে দেখাইয়া দিল। . HHN #