পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কথাটা শুনিয়া সকলেই বিশ্বিত ও কৌতুহলী হইয়া উঠিল। ইহার শেষ পৰ্য্যন্ত কি দাড়ায়, দেখিবার জন্য অপূৰ্ব্ব নিজের আকণ্ঠ পিপাসা সত্বেও বিপিনের হাত ধরিয়া বসিয়া পড়িল । একাদশী প্রশ্ন করিল, তোমার নামটি কি বাবা ? বাড়ি কোথায় ? ছেলেটি কহিল, আমার নাম শশধর ; বাড়ি ওঁদের গায়ে—কালীদহে । তোমার বাবার নামটি কি ? ছেলেটির হইয়৷ এবার অনাথ জবাব দিল ; কহিল, এর বাপ অনেকদিন মারা গেছে। পিতামহ রামলোচন চাটুয্যে ছেলের মৃত্যুর পর সংসার ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ; সাত বৎসর পরে মাস-খানেক হ’ল ফিরে এসেছিলেন। পরশু এদের ঘরে আগুন লাগে, আগুন নিবোতে গিয়ে বৃদ্ধ মারা পড়েচেন । আর কেউ নেই, এই নাতিটিই শ্রদ্ধাধিকারী। কাহিনী শুনিয়া সকলে দুঃখ প্রকাশ করিল, শুধু একাদশী চুপ করিয়া রহিল। একটু পরেই প্রশ্ন করিল, টাকার হাতচিঠা আছে ? যাও তোমার মাকে জিজ্ঞাসা করে এস । \ ছেলেটি জিজ্ঞাসা করিয়া আসিয়া কহিল, কাগজ-পত্র কিছু নেই, সব পুড়ে গেছে। একাদশী প্রশ্ন করিল, কত টাকা ? এবার বিধবা অগ্রসর হইয়া আসিয়া মাথার কাপড়টা সরাইয়া জবাব দিল, ঠাকুর মরবার আগে বলে গেছেন, পাচশ টাকা তিনি জমা রেখে তীর্থ-যাত্র করেন। বাবা, আমরা বড় গরীব ; সব টাকা ন দাও, কিছু আমাদের ভিক্ষে দাও, বলিয়া বিধবা টিপিয়া টিপিয়া কাদিতে লাগিল । ঘোষালমশাই এতক্ষণ খাতা লেখা ছাড়িয়া একাগ্রচিত্তে শুনিতেছিলেন, তিনিই অগ্রসর হইয় প্রশ্ন করিলেন, বলি কেউ সাক্ষী-টাক্ষী আছে ? বিধবা ঘাড় নাড়িয়া বলিল, না। আমরাও জানতুম না। ঠাকুর গোপনে টাকা জমা রেখে বেরিয়ে গিয়েছিলেন । ঘোষাল মৃদু হাস্ত করিয়া বলিলেন, শুধু কঁদিলেই ত হয় না বাপু ! এ-সব মবলগ টাকাকড়ির কাও যে ! সাক্ষী নেই, হাতচিঠা নেই, তা হলে কি-রকম হবে বল দেখি ? বিধবা ফুলিয়া ফুলিয়া কাদিতে লাগিল ; কিন্তু কান্নার ফল যে কি হইবে তাহ কাহারও বুঝিতে বাকি রহিল না। "একাদশী এবার কথা কহিল ; ঘোষালের প্রতি চাহিয়া কহিল, আমার মনে হচ্চে, যেন পাচশ টাকা কে জমা রেখে আর নেয়নি। তুমি একবার পুরোনো খাতাগুলো খুজে দেখ দিকি, কিছু লেখা-টেখা আছে না কি ? vවIV