পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ সইতে পারি, আমাকে আর কোন আদেশ তুমি ক’রে না। দু’জনের চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল, মুছে ফেলে বললাম, অপরাধ করেচি মা, তোর অবুঝ বুড়ে ছেলেকে তুই ক্ষমা কয়। অকস্মাৎ পূৰ্ব্ব-স্মৃতির আবেগে তাহার কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া আসিল । অবিনাশ নিজেও অনেকক্ষণ কথা কহিতে পারিলেন না, তাহার পর ধীরে ধীরে বলিলেন, আপ্তবাবু, কত ভুলই না আমরা সংসারে করি এবং কত অন্যায় ধারণাই না জীবনে আমরা পোষণ করি । আগুবাবু ঠিক বুঝিতে পারিলেন না, কহিলেন, কিসের ? এই যেমন আমরা অনেকেই মনে করি, মেয়ের উচ্চশিক্ষিত হয়ে মেমসাহেব বনে যায়, হিন্দুর প্রাচীন মধুর সংস্কার আর তার হৃদয়ে স্থান পায় না। কত বড় ভ্রম বলুন ত? আপ্তবাবু ঘাড় নাড়িয়া বলিলেন, ভ্রম অনেক স্থলেই হয় বটে। কিন্তু কি জানেন অবিনাশবাবু, শিক্ষাই বা কি, আর অশিক্ষাই বা কি, আসল বস্তু পাওয়া । এই পাওয়া না-পাওয়ার উপরেই সমস্ত নির্ভর করে। নইলে একের অপরাধ অপরের স্বন্ধে আরোপ করলেই গোল বাধে।—এই যে অজিত ! মণি কই ? বছর ত্রিশ বয়সের একটি মুত্র বলিষ্ঠ যুব ঘরে প্রবেশ করিল। তাহার কাপড়জামায় কালির দাগ কহিল, মণি আমাকেই এতক্ষণ সাহায্য করছিলেন, তার কাপড়েও কালি লেগেচে, তাই বদলে ফেলতে গেছেন। মোটরটা ঠিক হয়ে গেছে, সোফারকে সামনে আনতে বলে দিলাম । আশুবাবু কহিলেন, অজিত, ইনি আমার পরম বন্ধু শ্ৰীযুক্ত অবিনাশ মুখোপাধ্যায়। এখানকার কলেজের অধ্যাপক, ব্রাহ্মণ, একে প্রণাম কর । আগন্তুক যুবক অবিনাশকে ভূমিষ্ঠ প্রণাম করিল। উঠিয়া দাড়াইয় আগুবাবুকে উদ্দেশ করিয়া কহিল, মণির আসতে মিনিট-পাচেকের বেশী লাগবে না। কিন্তু আপনি একটু তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে নিন। দেরী হলে সব দেখবার সময় পাওয়া যাবে না। লোকে বলে তাজমহল দেখে আর সাধ মেটে না । আগুবাবু কহিলেন, সাধ না মেটবারই যে জিনিস বাবা । কিন্তু আমরা ত প্রস্তুভ হয়েই আছি। বরঞ্চ তোমারই দেরি, তোমারই এথনে কাপড় ছাড়তে বাকি । ছেলেটি নিজের পোষাকের প্রতি একবার দৃষ্টিপাত করিয়া কছিল, আমার আর বদলাতে হবে না, এতেই চলে যাবে। এই কালি-স্বদ্ধ ? W92.