পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেনা-পাওনা আমার কাছে তার স্বীকার করেচে। করেচে? আশ্চৰ্য্য! বলিয়া সে চুপ করিয়া বহিল। ষোড়শী কহিল, না, আশ্চৰ্য্য নয় । তারা আমাকে মা বলে । আমি তা জানি। জীবানন্দের হাতের মুঠ শিথিল হইয়া আসিল । সে কিছুক্ষণ স্থিরভাবে থাকিয়া ধীরে ধীরে কহিল, ভালই হয়েছে। আজ সকাল থেকেই আমি ভাবছিলাম অলকা, এই ভয়ানক শক্ত কাজ আমি করব কি করে ? আমি বঁচেলাম, আর কিছুই করবার রইল না। তুমি সমস্তই করে দিয়েচ। ষোড়শী মাথা নাড়িয়া কহিল, তোমার করবার আর কিছু না থাকতে পারে, কিন্তু আমার কাজ এখনো বাকী রয়ে গেছে। এই বলিয়া সে জীবানন্দের যে হাতটা স্বলিত হইয়া বিছানায় পড়িয়াছিল, তাহা নিজের মুঠোর মধ্যে গ্রহণ করিয়া তাহার কানের কাছে মুখ আনিয়া কহিল, নৌকে আমার প্রস্তুত, কোনমতে তোমাকে নিয়ে পালাতে পারলেই আমার এই সকল কাজের বড় কাজটা সারা হয় । চল । এই বলিয়া সে হেট হইয়া মাথাটা তাহার জীবানন্দের বুকের উপর রাখিয়া স্থির হইয়া রহিল। বহুক্ষণ কেহই কোন কথা কহিল না, কেবল একজনের প্রবল বক্ষম্পন্দন আর একজন নিঃশবো অণভব করিতে লাগিল । জীবানন্দ কহিল, কোথায় আমাকে নিয়ে যাবে ? ষোড়শী কহিল, যেখানে আমার দু'চোখ যাবে। কখন যেতে হবে ? এখনই । সাহেব এসে পড়ার আগেই । জীবানন্দ তাহাব মুখের প্রতি চাহ্যিা ধীরে ধীবে কহিল, কিন্তু আমার প্রজারা ? তাদের কাছে আমাদের পুরুষাঙ্গক্রমে জমা করা ঋণ ? ষোড়শী তাহার দষ্ট এড়াইয়। চুপি চুপি বলিল, পুরুষানুক্রমে আমাদের তা শোধ দিতে হবে। জীবানন্দ খুণী হইয়া বলিল, ঠিক কথা অলকা। কিন্তু দেরি করলে ত চলবে না। এখন থেকে ত আমাদের দু’জনকে এ ভার মাথায় নিতে হবে। ষোড়শী সহসা দুই হাত জোড় করিয়া কহিল, হুজুর, দাসীকে এইটুকু শুধু ভিক্ষে দেবেন, প্রজাদের ভার নেবার চেষ্টা করে আর ভারি করে তুলবেন না। সমস্ত জীবন ধরেই ত নানাবিধ ভার বয়ে এসেচেন, এখন অস্থস্থ দেহে একটু বিশ্রাম করলে কেউ নিলো করবে না । কিন্তু কে সাহেব এসে পড়তে পারে, চলুন । প্রত্যুত্তরে জীবানন্দ শুধু একটুখানি হাসিয়া তাহার হাত ধরিয়া উঠিয়। দাড়াইল। কহিল, এমন করে আমার সমস্ত ক্ষমতা তুমি কেড়ে নিয়ে না অলকা— আমাকে দুঃখীর কাজে লাগিয়ে দেখে কথখনো ঠকবে না। , 't