পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

معهم 8 পার্শ্বের অন্ধকার ঘরের মধ্যে রাখিয়া বাহির হইতে দ্বার রুদ্ধ করিয়া মহাবীর চলিয়া গেল, কিন্তু ভিতর হইতে বন্ধ করিবার উপায় না থাকায় ষোড়শী সেই রুদ্ধ দ্বারেই পিঠ দিয়া অত্যন্ত সতর্ক হইয়া বসিয়া রহিল । তাহার দেহ ও মন শ্রাস্তি-অবসাদের শেষ সীমায় আসিয়া পৌছিয়াছিল, এবং রাত্রের মধ্যেও হয়ত আর কোন বিপদের সম্ভাবনা ছিল না কিন্তু তথাপি ঘুমাইয়া পড়াও ত কোনমতে চলিবে না। এখানে একবিন্দু শৈথিলের স্থান নাই—এখানে একান্ত অসম্ভবের বিরুদ্ধেও তাহাকে সৰ্ব্বতোভাবে জাগ্রত থাকিতে হইবে । কিন্তু বাকী রাত্রিটা যেমন করিয়াই কাটুক, কাল তাহার সতীত্বের অতিশয় কঠোর পরীক্ষা হইবে তাহা সে নিজের কামেই শুনিয়াছে এবং ইহা হইতে বাচিবার কি উপায় আছে তাহাও তাহার সম্পূর্ণ অপরিজ্ঞাত। নিজের পিতার কথা মনে করিয়া ষোড়শী ভরসা পাইবে কি লজ্জায় মরিয়া গেল । র্তাহাকে সে ভাল করিয়াই চিনিত, তিনি যেমন ভীতু, তেমনি নীচাশয় । অনেক রাত্রে ঘরে ফিরিয়া এ দুর্ঘটনা জানিয়াও হয়ত তিনি প্রকাশ করিবেন না, বরঞ্চ সামাজিক গোলযোগের ভয়ে চাপিয়া দিবারই চেষ্টা করিবেন । মনে মনে এই বলিয়া তর্ক করিবেন, ষোড়শীকে একদিন জমিদার ছাড়িয়া দিবেই, কিন্তু কথাটা ঘাটাঘাটি করিয়া দেব-সম্পত্তি হইতেই যদি বঞ্চিত হইতে হয় ত লাভের চেয়ে লোকসানের অঙ্কটাই ঢের বেশি ভারি হইয়া উঠিবে। উপরন্তু নজরের টাকাটার সম্বন্ধেও যে তাহার তীক্ষ দৃষ্টি বহুদূর অগ্রসর হইয়া যাইবে ইহাও ষোড়শী স্পষ্ট দেখিতে লাগিল । তা ছাড়া, এই দুৰ্দ্দাস্ত ভূস্বামীর বিরুদ্ধে তিনি করিবেনই বা কি ! ছয়-সাত ক্রোশের মধ্যে একটা থানা নাই, চৌকি নাই—পুলিশের কাছে খবর দিতে গেলেও যে পরিমাণ সময়, অর্থ এবং লোকবলের প্রয়োজন তাহার কোনটাই তারাদাসের নাই। অতএব অত্যাচার যত বড়ই হোক, এই সুবৃহৎ শক্তির সম্মুখে অবনত-শিরে সহ করা ব্যতীত আর যে গত্যস্তর নাই, এই কথাটাই চোখে আঙ্গুল দিয়া ষোড়শীকে বার বার দেখাইয়া দিতে লাগিল । অথচ সমস্ত দুশ্চিন্তার মধ্যে মিশিয়া তাহার আর একটা চিন্তার ধারা নীরবে অনুক্ষণ বহিয়া যাইতেছিল-- সে ওই চওঁীমাতা, র্যাহাকে শিশুকাল হইতেই সে কায়-মনে পূজা করিয়া আসিয়াছে। কিন্তু ঐ যে লোকটা ও-ঘরে ঘুমাইতেছে—বাহার মূঢ়, ভারি নিশ্বাসের শস্ব অস্পষ্ট হইয়া তাহার কানে পৌছিতেছে, উহার ধর্ম ও অধৰ্ম্ম ভাল ও মন, আপনার ও পর - পৃথিবীর ষাবতীয় বস্তুর প্রতি কি গভীর নিৰ্ম্মম