পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ —চাইনে। আমি দাদার ওখানে নিশ্চিন্ত হয়ে থাকব ; ইনি যেন আর আমাকে আনতে না যান—আর যেন আমাকে জালাতন না করেন । এবার বিমলাও ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিল। কহিল, এ-সব বড়াই পুরুষমানুষের কাছে কোরো বোঁ, আমি ত মেয়েমানুষ, আমার কাছে ও কোরো না। তোমার বাপের বড়লোক, তোমার সংস্থান তারা করে দিয়েচেন—এই ত তোমার অহঙ্কার ? আচ্ছা, এখন যাচ্ছে যাও ; কিন্তু একদিন হুস হবে, যা হারালে তার তুলনায় সমস্ত পৃথিবীটাও ছোট। বেী, যা তুমি পেয়েছিলে, কম মেয়েমানুষেই তা পায়—সে জানি, কিন্তু যে অপব্যয় তুমি করলে, তাতে অক্ষয়ও ক্ষয়ে শেষ হয়ে যায়। বোধ করি গেলও তাই । সেই বইখানা বিমলার হাতেই ছিল। তাহার প্রতি দৃষ্টি পড়ায় ইদুর বুকের ভিতরটা আর একবার হু হু করিয়া উঠিল । বলিল, অহঙ্কার করবার থাকলেই লোকে করে। কিন্তু, আমার সৰ্ব্বনাশ হয় হবে, যায় যাবে, সেজন্যে ঠাকুরবি, তুমিই বা মাথা গরম কর কেন, আমিই বা যা-তা দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুনি কেন ? আমার থাকতে ইচ্ছে নেই,—থাকব না। এতে যা হয় তা হবে—কারু পরামর্শ নিতেও চাইনে, ঝগড়া করতেও চাইনে । বিমলা মৌন হুইয়া রহিল। তাহার ব্যথা অন্তর্যামী জানিলেন, কিন্তু এ-অপমানের পরে আর সে তর্ক করিল না। ইন্দু অগ্রসর হইবার উপক্রম করিতেই কহিল, দাড়াও ত বোঁ, তুমি সম্পর্কে বড়, একটা প্রণাম করি । సె সেদিন সন্ধ্যা হইতে সমস্ত আকাশ বাপিয়া মেঘ করিয়া বৃষ্টি পড়িতে লাগিল। ইন্দু মেয়ে লইয়া বিছানায় আসিয়া শুইয়া পড়িল। আজ তার ছোট ভগিনীপতি আসিয়াছিলেন, পাশের ঘর হইতে র্তাহাকে খাওয়ানো-দাওয়ানো গল্পগুজবের অস্ফুট কলধ্বনি যতই ভাসিয়া আসিতে লাগিল, ততই কিসের অব্যক্ত লজ্জায় তাহার বুক ভরিয়া উঠিতে লাগিল। তিন মাস হইতে চলিল, সে মেদিনীপুর আসিয়াছে। ছোট ভগিনীও আসিয়াছে। তাহার স্বামী এই দুই মাসের মধ্যে শান্তিপুর হইতে অন্ততঃ পাঁচ-ছয়বার আসা-যাওয়া করিলেন, কিন্তু নরেন্দ্র একটিবারও আসিলেন না, একখানা চিঠি লিখিয়াও খোজ করিলেন না । Rbrషి