পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ তারাদাস চেচাইয়া বলিল, বিশ্বাস করবেন না হুজুর, সমস্ত মিছে, সমস্ত বানানো । আগাগোড়া শিথানে কথা । সাহেব তাহার প্রতি লক্ষ্য না করিয়া শুধু মুখ টিপিয়া একটু হাসিলেন, এবং শিস্ দিতে দিতে প্রথমে বন্দুকটা তার পরে রিভলভার দুটাে বেশ করিয়া পরীক্ষা করিয়৷ জীবানন্দকে কেবল বলিলেন, আশা করি এ সকল রাখবার আপনার হুকুম আছে। এবং তারপর ধীরে ধীরে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন । বাহির হইতে র্তাহার গলা শোনা গেল, হামারা ঘোড়া লাও ; এবং ক্ষণেক পরেই ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দে বুঝা গেল, জেলার ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব বাড়ি হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়৷ গেলেন । & ম্যাজিস্ট্রেট-সাহেবের ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দ ক্রমশঃ ক্ষীণ হইয়া আসিল, পুলিশকৰ্ম্মচারীও আপনার অনুচরগণকে স্থানত্যাগের ইঙ্গিত জ্ঞাপন করিলেন—এইবার তারাদাসের নিজের অবস্থাটা তাহার কাছে প্রকট হইয়া উঠিল । এতক্ষণ সে যেন এক মোহাবৃত প্রগাঢ় কুহেলিকার মধ্যে দাড়াইয়া ছিল, হঠাৎ মধ্যাহ্ন স্বৰ্য্যকিরণে তাহার বাষ্পটুকু পৰ্যন্ত উবিয়া গিয়া দুঃখের আকাশ একেবারে দিগন্ত ব্যাপিয়া ধু ধু করিতে লাগিল । যতদূর দৃষ্টি যায়, কোথাও ছায়া, কোথাও আশ্রয়, কোথাও লুকাইবার স্থান নাই—কেবল সে আর তাহার মৃত্যু মুখোমুখি দাড়াইয়া দাত মেলিয়া হালিতেছে । সমস্ত জেলার যিনি ভাগ্যবিধাতা, তাহার অনুগ্রহ ও অনুকম্প নিতান্তই অপ্রত্যাশিত ও আশাতীত সুলভে লাভ করিয়া কল্পনা তাহার দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হইয়া উঠিয়াছিল। মনে করিয়াছিল এ কেবল ওই অত্যাচারী মাতালটাকে তাহার হাতে ধরাইয়া দেওয়াই নয়, ঐ তাহার ভাগ্যলক্ষ্মীর অপৰ্য্যাপ্ত দান। তাহার বরহস্তের দশ অঙ্গুলির ফাকে ফঁাকে আজ যে বস্তু ঝরিয়া পড়িবে, সে শুধু ওই জমিদারগোষ্ঠীর সৰ্ব্বনাশ নয়, এ তাহার জমিজমা ও টাকা-মোহরের রাশি । তাহার একমাত্র আশঙ্কা ছিল, পাছে তাহারা সময়ে না পৌঁছিতে পারে, পাছে সংবাদ দিয়া কেহ পূৰ্ব্বায়েই সতর্ক করিয়া দেয় ; এবং এ-পক্ষে তাহার চিন্তা, পরিশ্রম ও উদ্যমের অবধি ছিল না। ইহার বিফলতার দণ্ডও সে যে না ভাবিয়াছিল তাহা নয়, কিন্তু সে নিস্ফলতা পৌছিল যখন এইদিক দিয়া, ষোড়শীর স্বহস্তের আঘাতেই যখন কামনার এতবড় পাষাণ-প্রাসাদ ভিত্তি-সমেত ধুলিসাং হইয়া গেল, তখন প্রথমটা ९१